হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংসদের মামলার আবেদন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নিতে এজাহার দায়ের করেছেন সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এজাহারে সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাংসদ। সাংসদের পক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর আইনজীবী ও শহর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল জব্বার এজাহারটি সদর মডেল থানায় জমা দেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ শাহজাহান এজাহার পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের মামলার এজাহার থানায় গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নথিভুক্ত করার আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও নির্দেশের প্রয়োজন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সভাপতি সাজিদুর রহমান কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকার দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও হেফাজতের আগের কমিটিতে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুবারকুল্লাহ জেলা শহরের কান্দিপাড়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। মামলার এজাহারে তাঁদের দুজনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা। শহরের মঠের গোড়া এলাকায়
ফাইল ছবি

এজাহারে এই দুই প্রধান আসামি ছাড়া আরও ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মাওলানা আশরাফুল হোসেন তপু, বোরহান উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা আলী আজম, মাওলানা এরশাদ উল্লাহ, মাওলানা জুনায়েদ কাসেমী, মাওলানা নোমান আল হাবিব, মমিনুল হাসান তাজ, সুলেমান মোল্লা, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা আবদুল হাকিম, মাওলানা মনজুরুল হক ও খালেদ মোশাররফ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

স্থানীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এজাহারে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা চালান হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সহিংসতা চালিয়ে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র, গান পাউডারসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেন। এর আগে হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুবারকুল্লাহসহ অন্যান্য আসামিদের নির্দেশে তাঁদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, আইডি ও নিউজ পোর্টালে সাইবার সন্ত্রাস সংঘটিত করে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক, বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক স্ট্যাটাস দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা চালান হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এসব ঘটনায় জেলায় ১৫ জন নিহত হন। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা। এর মধ্যে ১২-১৪টি মামলার এজাহারে মাত্র ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ এসব মামলায় ৩৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।