হ্নীলার বেদখল বৌদ্ধবিহার পরিদর্শনে ঢাকার প্রতিনিধিদল, ৪ দফা সুপারিশ

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন। ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩০০ বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধবিহার। সাত বছর আগে বিহারের জমি দখল শুরু করে। অবৈধ বসতি গড়ে ওঠার পর একাধিকবার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বিহারে। বর্তমানে এটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। বিহারের জমি দখল করে তৈরি হয়েছে ৪০টির বেশি বসতি।

ঢাকা থেকে আসা নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল হ্নীলার ওই বিহার পরিদর্শন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বিহার পরিদর্শন করা এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক মুজিব মেহদী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও আদিবাসী ফোরামের নেতা-কর্মীরা।
আজ মঙ্গলবার কয়েক দফায় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৌদ্ধবিহার নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তাঁরা কক্সবাজার প্রেসক্লাবে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন সাংবাদিকদের। বিহারটি রক্ষায় তাঁরা চার দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। এই চার দফা হলো দ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছে বিহার ভূমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া, ধ্বংসপ্রাপ্ত বিহার পুনঃস্থাপন এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের নির্ভয়ে বিহারে যাতায়াত নিশ্চিত করা।

এ প্রসঙ্গে রোবায়েত ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও অবৈধ দখলদারদের খপ্পর থেকে ৩০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধবিহারের ভূমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। গতকাল আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে পৃথক বৈঠক করেছি। দুজনই আশ্বাস দিয়েছেন।’
২০০১ সালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সেন প্রু ক্যাং নামে পরিচিত রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহারটির তৎকালীন ভিক্ষু উ পঞঞা বংশ মহাথেরোর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সাংসদ মরহুম মোহাম্মদ আলী। বিহারের ১১ একর ভূমির ওপর রোপণকৃত বৃক্ষের লাভের অংশ ভাগ করার উদ্দেশ্যে চুক্তিটি করা হয়েছিল। চুক্তিতে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী মহল গাছ কাটা শুরু করে। পাশাপাশি বিহারের ভূমি দখল করে গড়ে তোলা হয় বসতঘর।

বৌদ্ধবিহার রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা কমিটির সহসভাপতি ক্যা জ অং প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিহারের জমিতে ৪০টির বেশি অবৈধ বসতি রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করে বিহারের ভূমিটি পরিচালনা কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা থাকলেও বিগত সাত বছরে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মকর্ম করতে পারছেন না।

সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলীর বড় ছেলে মাহবুব মোরশেদ আলী বলেন, ‘২০০১ সালে বিহারের ভান্তের সঙ্গে আমার বাবার একটি চুক্তি হয়। যার শর্ত ছিল, আমার বাবা গাছ লাগাবেন এবং লাভের অংশ সমানভাবে ভাগাভাগি করা হবে। আমরা ওই শর্ত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ আছি। আমাদের দখলে বিহারের কোনো জমি নেই, অতীতেও দখল করা হয়নি। বিহারের জমিতে যেসব ঘরবাড়ি ২০ বছর ধরে রয়েছে, তা ২০০১ সালের আগে ভান্তে নিজেই তাদের দয়া করে থাকার জন্য দিয়েছিলেন।’