১০ কেন্দ্রে নৌকার ভোট ৬৫

  • নির্বাচনে ১৯ হাজার ৯০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী।

  • আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৬৭৪টি।

নির্বাচন কমিশন

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে তিনি তৃতীয় হয়েছেন। এমনকি ১০ কেন্দ্রে তিনি ১০টি করেও ভোট পাননি।

গত বৃহস্পতিবার দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। চারজন প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯০৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এম এ বারী পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৮৭ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল ইসলাম ৩ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে আছেন তৃতীয় অবস্থানে। প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তিনি জামানত হারাচ্ছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২২৬। ভোট দিয়েছেন ৩৭ হাজার ৬৮২ জন। ভোট পড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল ইসলাম হয়েছেন তৃতীয়। তিনি জামানত হারাচ্ছেন।

ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতে নৌকা ১০টির কম করে ভোট পড়েছে।

দোহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ১৪৩ জন, এর মধ্যে নৌকায় পড়েছে মাত্র ৪টি। মঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭২৮ ভোটের মধ্যে নৌকায় ৪টি, কুমারনীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২০টির মধ্যে ৫টি, রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৩৪টির মধ্যে ৭টি, পান্ডারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৮৪টির মধ্যে ৮টি, নাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪১৫টির মধ্যে ৫টি, টেবলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৩৪টির মধ্যে ৮টি, দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫২২টির মধ্যে ৬টি, ধোপাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৭৫টির মধ্যে ৯টি এবং কান্দাগাঁও-নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৯৪টির মধ্যে ৯টি ভোট পড়েছে নৌকা প্রতীকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ১১ জন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, জেলা কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আজাদও তাঁদের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পান মো. নূরুল ইসলাম। তিনি দলের কোনো পদে নেই, ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।

প্রার্থী মনোনয়নে ‘ভুলকে’ পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, দোয়ারাবাজারে ভোটে উৎসব হয়। এবার সেটা ছিল না। প্রার্থী মনোনয়নে তাঁদের কোনো ভূমিকা ছিল না। যাঁকে নৌকা দেওয়া হয়, তিনি রাজনীতিক নন, ব্যবসায়ী। তারপরও শুরু থেকেই তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যবসায়িক চিন্তায় চলার কারণে মানুষ তাঁর কাছ থেকে সরে গেছে। এ কারণে মানুষ ভোটেই যাননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূরুল ইসলাম বলেন, একপর্যায়ে যখন বুঝতে পারেন অনেকেই তাঁর কাছ থেকে সরে গেছেন, একা হয়ে পড়ছেন, তখন তিনিও হাল ছেড়ে দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। বেশি কথা বললে সমস্যা, আমার ক্ষতি হয়ে যাবে।’

প্রসঙ্গত, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম গত ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। পরে শূন্য পদ পূরণে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।