১০ জুন থেকে শরীয়তপুরে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

শরীয়তপুরে ১০ জুন থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে
প্রথম আলো

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ জেলায় ১০ জুন থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। অবৈধ থ্রি–হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বাস চলাচলকারী সড়কে বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংগঠনটির পৌর বাস টার্মিনাল কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির গত বছরের একটি সভায় বাস চলাচল করে এমন সড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হলে ১০ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে বলে ঘোষণা দেন পরিবহন ও শ্রমিক নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু ব্যাপারী, শরীয়তপুর আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা ও বাসমালিকেরা বলেন, শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পাঁচ উপজেলায়, ঢাকা-শরীয়তপুর রুটের মঙ্গলমাঝির ঘাট, চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কের আলুর বাজার, মাদারীপুর, বেনাপোল, সাতক্ষীরা, কুয়াকাটায় বাস চলাচল করছে। করোনার কারণে এর মধ্যে আন্তজেলা বাস চলাচলে মালিক ও শ্রমিকেরা লোকসানে পড়েছেন। অনেক শ্রমিক পেশা হারিয়েছেন। আন্তজেলার সড়কগুলোতে বাসের পাশাপাশি থ্রি–হুইলার, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল করে। এ কারণে বাসে যাত্রী কম চলাচল করে। ওই ছোট যানবাহনের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।

জেলার সড়ক নিরাপত্তার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। যার প্রধান জেলা প্রশাসক। সরকারের সব সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি ওই কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। গত বছরের ৩ মার্চ ওই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাস চলাচল করে এমন সড়কে থ্রি–হুইলার, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ৯ মের সভায় সিদ্ধান্ত হয় অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চলাচল বন্ধ, কম বয়সি ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক করার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, জেলার অধিকাংশ সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। তারপরও চালক ও মালিকেরা জনসাধারণের সেবার কথা চিন্তা করে পরিবহন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে এমনিতে লোকসান। তবে সবচেয়ে ক্ষতি করছে অবৈধ থ্রি–হুইলার, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। তাঁদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আর এর দায় নিতে হচ্ছে বাসমালিক ও শ্রমিকদের। অবিলম্বে এসব যান বন্ধ করতে হবে। তা না হলে পরিবহন ধর্মঘট করা হবে।

শরীয়তপুর আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, করোনার কারণে পরিবহন ব্যবসায় ধস নেমেছে। জেলার কয়েক হাজার শ্রমিক অসহায় জীবন যাপন করছেন। অনেকে পেশা ছেড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাস চলাচল করা সড়কে অবৈধ ছোট যানবাহন বন্ধের দাবি জানান তিনি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের দাবি যৌক্তিক। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সড়ক নিরাপত্তা কমিটির আগের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা একটি স্মারকলিপি সম্প্রতি দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সমাধান করতে।