১০ বছরে ১৭ মামলার আসামি সেই আশিক

২০১১ সালে সৈকতে একজন পর্যটককে মারধর করে প্রথম মামলার আসামি হন আশিক।

মো. আশিক

কিশোর বয়সে ‘অপরাধে জড়ানো’ কক্সবাজারের সেই মো. আশিক ১০ বছরে ১৭ মামলার আসামি হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী শহরে ইয়াবা বেচাকেনা, চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র এসব কথা জানিয়েছে।

২২ ডিসেম্বর কক্সবাজার ভ্রমণে আসা এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আলোচনায় আসেন আশিক (২৮)। ধর্ষণের অভিযোগে ২৩ ডিসেম্বর রাতে আশিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ওই নারীর স্বামী।

পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২০ আগস্ট সৈকতে একজন পর্যটককে মারধর করে প্রথমবারের মতো মামলার আসামি হন আশিক। ২০১২ সালের ২০ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলা হয় এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর আশিকুলের বিরুদ্ধে ডাকাতির চেষ্টার মামলা হয়।

পুলিশ জানায়, ২০১১ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরে আশিকুলের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয় ১৭টি। নারী ও শিশু নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব মামলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজারের কয়েকটি হোটেলের ব্যবস্থাপকেরা বলেন, আশিক ও তাঁর লোকজন নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। ১৬ ডিসেম্বর তিনি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কটেজ জোনে চাঁদাবাজি শুরু করেন। রাত ১০টার দিকে আশিকের বাহিনীর লোকজন দুটি কটেজের মালিককে জিম্মি করে ১ লাখ ৬০ টাকা টাকা ও কয়েকটি মুঠোফোন লুটে নিয়ে যায়।

বাহারছড়ার বাসিন্দা ও কক্সবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাছিমা আকতার বলেন, আশিকের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী ইয়াবার কারবার, চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলার কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খোলার সাহস পান না।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে বলেন, আশিককে গত ৭ নভেম্বর একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওই মামলায় ১৫ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। এরপর আবার অপকর্মে জড়ান আশিক।

আদালতে জবানবন্দি

ধর্ষণের শিকার নারী কক্সবাজারের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, আশিকের নেতৃত্বে তিনজন প্রথমে ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর তাঁর স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। চায়ের দোকান থেকে তাঁকে মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে হোটেলে নিয়ে যান আশিক। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র এ কথা জানায়।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই নারী ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালতের বিচারক হুমায়ূন তানজীন।

বর্তমানে ওই নারী ও তাঁর স্বামী-সন্তান ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে আছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টানা তিন মাস ধরে ওই নারী কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছেন। সন্ত্রাসী আশিকের সঙ্গেও তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল। কক্সবাজারে অবস্থানকালে তিনি কী কাজ করেছেন, সবই পুলিশের কাছে তুলে ধরেছেন ওই নারী। আদালতে দেওয়া জবানবন্দির সঙ্গে পুলিশকে দেওয়া তথ্যের ভিন্নতা নেই বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

হোটেলের ব্যবস্থাপক রিমান্ডে

হোটেল কক্ষে নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার জিয়া গেস্ট ইনের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিনকে (ছোটন) গতকাল শনিবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিললুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নারী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গতকাল অভিযান চালিয়ে মেহেদী নামের একজনকে আটক করেছে। এই মেহেদী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান (বাবু) কি না, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ জানায়, মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় কাউকে নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না।