১০টি এসির ৯টিই নষ্ট, গরমে রোগীদের কষ্ট

আইসিইউর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) অকেজো হয়ে পড়ায় নিদারুণ ভোগান্তিতে দগ্ধ রোগীরা

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শীততাপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে আছে। তাই বদ্ধ ঘরে গরমে অস্থির রোগী ও স্বজনেরা। মা শীলা রানীকে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছেন ছেলে শীপন সাহা। গতকাল বিকেলে
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) অকেজো হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা। ইউনিটটির ১০টি এসির ৯টিই ৬ মাস ধরে নষ্ট। ফলে দগ্ধ হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা এই গরমে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয় বার্ন ইউনিট। বিশেষায়িত এ ইউনিট শুরু থেকেই উত্তরাঞ্চলের দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে প্রতিনিয়ত বাতাস করে চলেছেন স্বজনেরা। কেউ ছোট টেবিল ফ্যান শয্যার পাশে রেখে বাতাসের ব্যবস্থা করেছেন। এদিন ১৪টি শয্যায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এসিগুলো কয়েকবার মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ছয় মাসে সেগুলো ঠিক হয়নি। রোগীদের ড্রেসিং করার কক্ষের এসিটি শুধু সচল। ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক এম এ হামিদ বলেন, একটু সার্ভিসিং করলেই যন্ত্রগুলো ঠিক হয়ে যায়। হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

১৪ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নিতে দেখা যায় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের শিশু আবদুল্লাহকে (৪)। পাশে পাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন মা আফরোজা বেগম। তিনি বলেন, চুলার আগুনে শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয় আবদুল্লাহর। এক মাসের বেশি সময় ধরে এ হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা চলছে। বেশি গরম পড়লে ছেলেটা ছটফট করে।

পাশের শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন একরামুল হক (২৮) নামের এক তরুণ। তিনি দুই মাস ধরে ভর্তি। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর একরামুলের পিঠ পুড়ে গেছে। একপাশ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। একরামুল বলেন, হাসপাতালের বদ্ধ কক্ষের ভেতর বাতাসও গরম। ঘাম আর রোগীদের পোড়া অংশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শিলা রানী নামের (৬০) এক নারী আড়াই মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দগ্ধ হওয়া দুই পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছেন। সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলে কলেজশিক্ষার্থী শিপন সাহা বলেন, ‘এসি নষ্ট থাকায় এই গরমে একেবারে কাহিল অবস্থা। কেননা, এটি একদম বদ্ধ ঘর। সব সময় গরম বাতাস।’

বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিম বলেছিলেন, ‘এসিগুলো ঠিক হয়ে যাবে।’ কবে নাগাদ ঠিক হবে, জানতে চাইলে বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে।’ তাঁর সঙ্গে কথা বলার এক দিন পর গতকাল শুক্রবার বিকেলে বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, দুটি কক্ষে চারটি বড় স্ট্যান্ডযুক্ত ফ্যান সরবরাহ করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল ভর্তি রোগীদের মধ্যে একজন দগ্ধ রোগী মারা গেছেন। দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।