১১ মাসে লিফট বিকল আটবার, রোগীদের ভোগান্তি

লিফট বিকল। স্ট্রেচারে করে রোগীদের ওয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছে। রোববার ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নতুন ভবনেপ্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবন হস্তান্তরের এক বছরও পার হয়নি। এর মধ্যে লিফট বিকল হয়েছে আটবার। এতে ছয়তলার হাসপাতাল ভবনে ওঠা-নামা করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা।

গণপূর্ত বিভাগ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে দিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল চত্বরে নতুন একটি ১০ তলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়।২০১৮ সালের ২৯ মার্চ নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এর প্রায় ২০ মাস পর গত বছর ৫ নভেম্বর নতুন ভবনটি বুঝে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই ভবনে সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের চলাচলের জন্য দুটি লিফট রয়েছে।
কিন্তু দুই মাসের মধ্যে লিফট দুটি বিকল হয়ে যায়। পরে চলাচলে উপযোগী করা হলেও প্রায় প্রতি মাসে লিফট দুটির কোনো না কোনোটি বিকল হতে থাকে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট হাসপাতালের দুটি লিফটেই বিকল হয়ে যায়। এ অবস্থায় তৃতীয় তলায় কার্ডিওলজি বিভাগ, পঞ্চম তলায় সার্জারি ও ষষ্ঠ তলায় মেডিসিন বিভাগের রোগী ও তাঁর স্বজনদের সিঁড়ি ভেঙে ওঠা–নামা করতে হচ্ছে।
লিফট দুটি বিকল হয়ে যাওয়ার পর তা মেরামতের জন্য ৩ সেপ্টেম্বর গণপূর্ত বিভাগ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ এখন পর্যন্ত লিফট মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

লিফট বিকল হওয়ায় রোগীদের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হচ্ছে। রোববার হাসপাতালের নতুন ভবনে
প্রথম আলো

আজ রোববার সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আসেন সদর উপজেলার কিসামত কেশুরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রায় ২০ মিনিট পরে একজন জানায় লিফট নষ্ট হয়ে গেছে। পরে কয়েকজনের সাহায্যে স্ট্রেচারে করে ছয়তলার ওপরে তোলা হয়। এ জন্য তাঁদের চা-নাশতার টাকা দিতে হয়েছে।’
শনিবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন হরিপুরের রফিজউদ্দিন। আজ বেলা ১১টার দিকে তিনি মারা যান। রফিজউদ্দিন মারা যাওয়ার পর লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন স্বজনেরা। পরে কয়েকজন স্ট্রেচারে করে লাশটি নামিয়ে দেন। বিনিময়ে তাঁরা নেন ৪০০ টাকা।
রোববার সকালে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন রহিমানপুর গ্রামের আবদুল হালিম। চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। লিফট নষ্ট থাকায় সিঁড়ি দিয়ে তিনতলার কার্ডিওলজি বিভাগে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর এক স্বজন। মনসুর উদ্দিন নামের ওই স্বজন বলেন, ‘হাসপাতালের এই লিফট প্রতি মাসে নষ্ট হয়। নতুন লিফট মাসে মাসে নষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি খটকা লাগছে। ভালো মানের লিফট লাগানো হলে তো এত দ্রুত নষ্ট হওয়ার কথা নয়।’
ছয়তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি এক রোগীর স্বজন সালেহা বেগম বলেন, হাসপাতালের লিফট নষ্ট থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের সিঁড়ি দিয়ে ছয়তলায় টেনেহিঁচড়ে তুলতে হচ্ছে। এতে রোগীর অবস্থা আরও অবনতি হয়।

হাসপাতালের লিফট প্রতি মাসে নষ্ট হয়। নতুন লিফট মাসে মাসে নষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি খটকা লাগছে। ভালো মানের লিফট লাগানো হলে তো এত দ্রুত নষ্ট হওয়ার কথা নয়।
মনসুর উদ্দিন, রোগীর স্বজন

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ বলেন, ভবন হস্তান্তরের পর থেকেই হাসপাতালের দুটি লিফটের মধ্যে কোনোটা না কোনোটা বিকল হয়ে থাকে। ১৩ থেকে ১৪ দিন হলো দুটিই বিকল হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে লিফট দুটি আটবার বিকল হলো। একবার বিকল হলে সেটা মেরামতে কমপক্ষে সাত দিন লাগে। এ সময় রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হাসপাতালের লিফটের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। লিফট নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁদের লিখিত জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাজিদার রহমান বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই লিফট দুটি বন্ধ রয়েছে। ওয়ারেন্টির মেয়াদকাল থাকায় মেরামতের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দিন দু-একের মধ্যে তারা টেকনিশিয়ান পাঠিয়ে লিফট দুটি সচল করবে বলে জানিয়েছে।