১৪ দফা বৈঠকের পর চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ল ১৮ টাকা

চা-বাগানে পাতা তুলছেন নারী শ্রমিকেরা। ভাড়াউড়া চা-বাগান, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।
ফাইল ছবি

চা–শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ টাকা করা হয়েছে। চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মজুরি (বেতন) বৃদ্ধিসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে এই মজুরি বাড়ানো হয়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২১ মাস ১৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) এই চুক্তি সম্পাদন হয়।

বাংলাদেশ চা–বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৬৭টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৭০০ জন।

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা-বাগান সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। এরপর প্রথা অনুযায়ী নতুন চুক্তি হওয়ার কথা। দুই বছর পরপর দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন চুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের চাহিদা বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বৈঠকে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে দর–কষাকষি চলেছে।

তবে কারোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আলোচনা পিছিয়ে পড়ে। সম্প্রতি আবার আলোচনা শুরু হয়। এদিকে চুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় দুর্গাপূজার আগেই মজুরি বৃদ্ধি ও সে অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে চা-শ্রমিকেরা ৮ অক্টোবর থেকে বাগানে বাগানে আট দিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন ও মিছিল-সমাবেশ করেছেন। তারই একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হলো। নতুন চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ১৪ বার বৈঠক হয়েছে।

যদিও শ্রমিকদের চাহিদামতো মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। তারপরও করোনার সময়ে এই মজুরিতে শ্রমিকেরা মোটামুটি খুশিই আছে। আগামী ডিসেম্বরে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আগামী জানুয়ারি মাসে মালিকপক্ষের কাছে নতুন চার্টার ডিমান্ড দেওয়া হবে।
বিজয় হাজরা, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন
দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন চা–শ্রমিকেরা। মালনীছড়া চা-বাগানের সামনে, সিলেট শহরতলি।
ফাইল ছবি

নতুন চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি করা হয়েছে ১২০ টাকা। আগে ছিল ১০২ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই মজুরি কার্যকর হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ অক্টোবর (২০২০) পর্যন্ত বকেয়া মজুরি চার দফায় পরিশোধ করা হবে। নতুন মজুরি দেওয়া শুরু হবে আগামী সোমবার (১৯ অক্টোবর) থেকে। সামনে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা থাকায় পূজার আগে প্রত্যেক শ্রমিককে বকেয়া টাকার মধ্যে তিন হাজার টাকা করে আগাম পরিশোধ করা হবে।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে দফায় দফায় ১৪ বার বৈঠক হয়েছে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দৈনিক মজুরি ২০৪ টাকা করার দাবি ছিল। শেষ পর্যন্ত মালিকপক্ষ ১২০ টাকায় সম্মত হয়েছে। গতবারের চুক্তির চেয়ে ১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও দুই পক্ষের বৈঠকে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় যুক্ত করে চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে। পূজার আগে সব শ্রমিককে তিন হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হবে। আগামী সোমবার থেকে পূজার আগেই এই টাকা দেওয়া হবে।

বিজয় হাজরা বলেন, ‘যদিও শ্রমিকদের চাহিদামতো মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। তারপরও করোনার সময়ে এই মজুরিতে শ্রমিকেরা মোটামুটি খুশিই আছে। আগামী ডিসেম্বরে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আগামী জানুয়ারি মাসে মালিকপক্ষের কাছে নতুন চার্টার ডিমান্ড দেওয়া হবে।’