১৪ বছর পর নিজেই বাড়িতে ফিরে এলেন ‘অপহৃত’ রুবেল

মো. রুবেল
ছবি: সংগৃহীত

নিখোঁজের ১৪ বছর ২ মাস ৭ দিন পর নিজ গ্রামে ফিরে এসেছেন মো. রুবেল নামের এক যুবক। তাঁকে অপহরণ করার অভিযোগে মামলা করেছিলেন তাঁর মা। সেই মামলায় আসামি করা হয় দুই মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন মেয়াদে জেলহাজতে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই যুবক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়ের পার এলাকায় ফিরে আসেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে রাত ১০টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে ৫ বছর বয়সী মো রুবেলকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগে তার মা রাহিমা বেগম মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই বছরের ২০ জানুয়ারি বাদীর দুই ছেলে হাবিবুর রহমান ও মো. রুবেল বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। আর তিনি তাঁর বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে মো. কালাই ও নুরুল ইসলাম বাড়িতে এসে তাদের ঘুম থেকে তুলে হাবিবুর ও রুবেলকে জমির মাটি কাটার হিসাব রাখার কথা বলেন। তাঁদের কথা বিশ্বাস করে রুবেল তাঁদের সঙ্গে যায়। ফিরে না আসায় হাবিবুর তাকে খুঁজতে যায়। পরদিন রাহিমা বাড়িতে ফিরে এলে তাঁকে ঘটনা জানায়। খোঁজাখুঁজি করে রুবেলকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাহিমা বেগম। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ আদালতে অপহরণ মামলা করেন তিনি। মামলায় আসামি করা হয় ১৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা হলেন নুরুল ইসলাম ও জুলহাস উদ্দিন।

পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান। ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে বাদী আদালতে নারাজি দেন। পরে মামলার তদন্ত পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কয়েক মাস তদন্ত করে সিআইডিও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বাদী তাতেও নারাজি দেন। পরে দায়িত্ব পায় র‌্যাব। এ সংস্থা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে তাঁদের রিমান্ডে নেয়। অন্যরা ছিলেন পলাতক। তবে র‌্যাব মামলার তদন্ত শেষ করতে না পারায় পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান ফরাজী তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিন মামলাটি নিষ্পত্তি করেন আদালত।

গ্রেপ্তার হয়ে আড়াই মাস কারাগারে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, রুবেল নামের এই যুবককে তিনি কখনো দেখেননি। তাকে আজ প্রথম দেখলেন। কিন্তু অপহরণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর মতো আরও ৫ জন ২ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত জেল খেটেছেন। পরে তো মামলাই শেষ হলো।
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম বলেন, মামলার পর থানা থেকে তাঁদের ধরার চেষ্টা করা হয়। পরে র‌্যাব মামলার তদন্ত পাওয়ার পর ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের ১০ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেয়। তিনি সাড়ে ৪ বছর বান্দরবানে পালিয়ে ছিলেন। মামলা শেষ হওয়ার পর ফিরে এসেছেন।

ফিরে আসা যুবক মো. রুবেল বলেন, তাঁরা দুটি গরু পালতেন। গরুর জন্য ঘাস না কাটলে মা মারতেন। আবার ঘরে খাবারও পেতেন না। এ জন্য সাত বছর বয়সে ঘর থেকে বের হয়ে চলে যান। এত বছর ছিলেন ঢাকার মগবাজার, হাতিরঝিলে। এর মধ্যে বিয়ে করেছেন। গত বছর এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে কথা হয়। বাড়ি ফিরতে চাইলে মা মামলার বিষয়টি জানিয়ে নিষেধ করেন। তাই তখন আসেননি। বৃহস্পতিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রামে ফেরেন। কিন্তু গ্রামের মানুষ চিনতে পেরে থানায় নিয়ে আসেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বলেন, ফিরে আসা যুবক রুবেলকে স্থানীয় লোকজন রাতে পুলিশ হেফাজতে নেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।