১৫ বছরের অপেক্ষায় পাওয়া সন্তানের সঙ্গে মারা গেলেন মা-ও

ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস। এই দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও সাতজন আহত হন।
ছবি: প্রথম আলো

বিয়ের পর ১৫ বছর হয়ে গেলেও রশিদ খান ও রুবি আক্তার দম্পতির সন্তান হচ্ছিল না। সন্তানের জন্য তাঁরা মানত করেছিলেন সিলেটের হজরত শাহজালালের (র.) মাজারে। সেই মানত পূরণ করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ১৫ বছরের অপেক্ষায় পাওয়া মেয়ে রাহিমার (৩) সঙ্গে মারা গেলেন মা রুবি আক্তার (৪০)। ওই দুর্ঘটনায় মা–মেয়েসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

গতকাল শনিবার রাত ১২টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার পাঁচদোনার সাকুরার মোড়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও সাতজন আহত হন। হতাহত যাত্রীদের বাড়ি ঢাকার আশুলিয়ার জিরাব এলাকায় এবং তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়।

নিহত যাত্রীরা হলেন মুক্তি আক্তার (৩০) ও তাঁর ছেলে সাদেকুল (৮), রুবি আক্তার (৪০) ও তাঁর মেয়ে রাহিমা (৩), রোকেয়া বেগম (৫২)। আহত যাত্রীরা হলেন রাজিয়া (৪০), সাইফা (১২), ইসরাত জাহান (৮), সামসুন্নাহার (৬০), শারমিন (৩৫), রশিদ (৪০) ও কাজীমুদ্দীন (৫২)।

হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে রশিদ খান ও রুবি আক্তার দম্পতির ঘরে জন্ম হয় রাহিমার। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবসহ নানা কারণে হজরত শাহজালালের (র.) মাজারে গিয়ে মানত পূরণ পিছিয়ে যায়। গত শুক্রবার রাতে পাঁচ পরিবারের ১৪ স্বজন মিলে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। গতকাল সকালে প্রথমে হজরত শাহজালালের (র.) মাজারে মানত পূরণ করেন। পরে হজরত শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেন। দুই মাজার জিয়ারতের পর দুপুরের দিকে সবাই সিলেটের জাফলংয়ে ঘুরতে যান। ফেরার পথে তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু রাহিমা। নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানোর পথে মৃত্যু হয় শিশুটির মা রুবি আক্তারের।

সাইফুল ইসলাম খান নামে রুবি আক্তারের স্বজন বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় আমাদের সব উল্টেপাল্টে গেল।’

মাধবদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল ইসলাম দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে ও কোনো অভিযোগ না থাকায় আজ দুপুরে বিনা ময়নাতদন্তে মা–মেয়েসহ পাঁচজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।