১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ: বগুড়ায় যমুনা ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

পরস্পরের যোগসাজশে প্রায় ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বেসরকারি যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের বগুড়া শহরের বড়গোলা শাখার তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাংকের বড়গোলা শাখা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

গ্রেপ্তার তিন কর্মকর্তা হলেন যমুনা ব্যাংকের বগুড়ার বড়গোলা শাখার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক (৩৮), নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম এবং কর্মকর্তা আবদুর রউফ (৩৬)। মামলার অপর আসামি ব্যাংকের বড়গোলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) সাওগাত আরমান। তিনি ব্যাংকটির এই শাখা থেকে ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের আরেকটি মামলায় গত ২৮ জুলাই থেকে কারাগারে। তাঁকেও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে সাওগত আরমানসহ চার কর্মকর্তাকে আসামি করে দুদক বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলা করে। এর পরপরই দুদকের একটি দল ব্যাংকের শাখায় গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন মামলার বাদী ও দুদক বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক সাওগাত আরমানসহ চারজনকে আসামি করে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ছাড়াও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় নতুন মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার তিন কর্মকর্তাকে বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কাজে দরপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টেন্ডার সিকিউরিটি ও পারফরম্যান্স জামানত দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু যমুনা ব্যাংকের বড়গোলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সাওগাত আরমানসহ অন্য আসামিরা কর্মরত থাকাকালে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এবং প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন না নিয়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩৮১টি পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ও টেন্ডার সিকিউরিটি ইস্যু দেখান।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব জাল পরফরম্যান্স গ্যারান্টি ও টেন্ডার সিকিউরিটি ইস্যু দেখিয়ে আসামিরা জালিয়াতির মাধ্যমে উল্লিখিত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতে ব্যাংক নির্দিষ্ট কমিশন থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও সরকার বিপুল আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই জালিয়াতির ঘটনায় বগুড়া ও রাজশাহী জেলার ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক গ্রাহকের নামে ভুয়া পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ও টেন্ডার সিকিউরিটি ইস্যুর তথ্য–প্রমাণ মিলেছে। তদন্তে জালিয়াতির সঙ্গে কোনো ঠিকাদার বা গ্রাহকের সংশ্লিষ্টতা মিললে মামলায় তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে।

এর আগে যমুনা ব্যাংকের একই শাখায় গ্রাহকের হিসাব নম্বর থেকে ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক সাওগাত আরমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই দুদকে আলাদা একটি মামলা হয়। ওই মামলায় সাওগত আরমানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে আত্মসাৎ করা অর্থ দুই স্ত্রী জহুরা সেতারা খানম ও নাজিয়া জাহান এবং বান্ধবী নিগার সুলতানার নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করেছেন। ছোট স্ত্রী নাজিয়া জাহানের নামে বগুড়ায় একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন। আদালত সাওগাত আরমান ছাড়াও তাঁর দুই স্ত্রী এবং বান্ধবীর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও ফ্ল্যাটের মালামাল ক্রোক করার নির্দেশ দেন। সাওগাত আরমান রংপুর জেলা সদরের কামালকাসনা এলাকার বাসিন্দা।