১৬ মাস পর এক ইউপি সদস্যসহ সাক্ষ্য দিলেন দুজন

ব্লগার অনন্ত বিজয়
সংগৃহীত

কয়েক দফায় পেছানোর ফলে প্রায় ১৬ মাস পর সিলেটের বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ মঙ্গলবার। এদিন এক ইউপি সদস্যসহ দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা আসামি গ্রেপ্তার অভিযানের প্রত্যক্ষদর্শী। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে ওই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য দেওয়া দুজন হলেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফখর উদ্দিন ও পূর্ব পালজুর গ্রামের বাসিন্দা শফিক আহমদ।

এর আগে গত বছরের ৭ মে সর্বশেষ সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছিল। এরপর সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় একাধিকবার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পেছানো হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ ধার্য করা হয়। নতুন দুজনসহ এ পর্যন্ত মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ১২ জন। এ মামলায় মোট ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট ভোররাতে কানাইঘাটের পূর্ব পালজুর গ্রামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আসামি গ্রেপ্তার অভিযানের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেন ফখর উদ্দিন ও শফিক আহমদ। সিআইডির ওই অভিযানে মামলার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেওয়া একমাত্র আসামি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহীকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, এই দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় এই মামলায় কারাবন্দী থাকা সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী ও আবুল খায়ের রশীদ আহমদকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ আদালত পরে ধার্য করবেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ মনিরউদ্দিন জানান, গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর সম্প্রতি মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। এই ট্রাইব্যুনালে গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ওই দিন সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। এরপর ৮ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ ছিল। ওই তারিখেও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে আরেক দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ পেছায়।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব পালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের পালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার বাসিন্দা সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।