‘১৭ দিন হেঁটে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফে’

পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে হেঁটে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌঁছান সাহেদ আহমেদ। মঙ্গলবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে।ছবি: প্রথম আলো

পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় হেঁটে পৌঁছেছেন এক তরুণ। আজ মঙ্গলবার তিনি শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে পৌঁছান।

এই তরুণ হলেন রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার সাহেদ আহমেদ ওরফে রিমন (২৮)। তিনি পেশায় একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার।

সাহেদ বলেন, তিনি গত ২০ ডিসেম্বর সকালে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেন। আজ বিকেলে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে ১৭ দিন। পাড়ি দিয়েছেন ৯১০ কিলোমিটার পথ।

যাত্রাপথে সাহেদ ১৪টি জেলা পার হয়েছেন। এগুলো হলো পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।

আজ বিকেলে ঘোলারচর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, মাথায় টুপি পরা সাহেদের গায়ে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত টি–শার্ট। হাতে ব্যানার। তাতে বড় করে লেখা—পরিবেশ, বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় পায়ে হেঁটে যাত্রা।

সাহেদ জানান, তাঁর যাত্রায় একজন সঙ্গী ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আসাদুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়ায় পৌঁছার পর পায়ে ফোস্কা পড়ার কারণে আসাদুল আর হাঁটতে পারেননি। তাঁর আগে বাংলাদেশের আরও ১২ জন এ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন। তিনি ১৩তম ব্যক্তি।

আজ বিকেলে ঘোলারচর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, মাথায় টুপি পরা সাহেদের গায়ে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত টি–শার্ট। হাতে ব্যানার। তাতে বড় করে লেখা—পরিবেশ, বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় পায়ে হেঁটে যাত্রা।

সাহেদ বলেন, ‘মানুষ এখনো অতিথি পাখি শিকার করে, বন-জঙ্গল কেটে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট করে। এতে জনজীবন হুমকির মুখে পড়ছে। তাই আমার লক্ষ্য ছিল, চলার পথে মানুষকে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন করে তোলা।’

সাহেদের ব্যানারে আরও লেখা—পরিবেশ বাঁচাও, বন বাঁচাও, পাখি বাঁচাও। বন্য প্রাণী সুরক্ষিত হোক, বেঁচে থাক প্রকৃতি।

আসুন সবাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করি।
সাহেদ আহমেদ, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফে হেঁটে আসা তরুণ

পরিবেশ রক্ষায় এত পথ পাড়ি দেওয়া এই তরুণ মনে করেন, বন ধ্বংস, বন্য প্রাণী ও পরিযায়ী পাখি শিকার, পানি ও বায়ুদূষণ, নদী দখল ও ভরাট, মাত্রাতিরিক্ত ও ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার, পাহাড়ে বন উজাড় করে অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক উত্তোলনের কারণে দেশের পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। এসব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

সাহেদ বলেন, চুনতি, বাইশারী, হাজারীখিল, উখিয়া ও টেকনাফের বনগুলো আজ হুমকির মুখে। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে উখিয়া-টেকনাফের জীববৈচিত্র্য আজ বিপন্নপ্রায়। প্রতিনিয়ত হাতি মেরে ফেলা হচ্ছে কক্সবাজার অঞ্চলে। এসব বন ও বন্য প্রাণী রক্ষা করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

পরিবেশ, বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা দরকার বলে মনে করেন এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘আসুন সবাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায়, পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হই। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করি। আর এই উদ্দেশ্যেই আমার এই পদযাত্রা।’