১৭ বছর আগে হারানো সন্তান ফিরে এল মা–বাবার বুকে

১৭ বছর আগে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রামের বাসার মিয়া (৫৫) ও খোদেজা বেগম (৪২) দম্পতির হারিয়ে যাওয়া ছেলে সবুজ ফিরে এসেছেন মা–বাবার বুকেছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর আগে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে মাত্র ৪ বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে সবুজ। এরপর অনেক খুঁজেও ছেলেকে ফিরে পাননি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার সুচিপড়া গ্রামের বাসার মিয়া (৫৫) ও খোদেজা বেগম (৪২) দম্পতি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সেই ছেলেই ফিরে এসেছেন তাঁর মা–বাবার বুকে। দুই পক্ষের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে এক রেডিও উপস্থাপকের ইউটিউব অনুষ্ঠান। যদিও পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছেলে ও মা–বাবা উভয় পক্ষই বিভিন্নভাবে পরস্পরের পরীক্ষা নেন। পরে সবুজ যখন নিশ্চিত হন, তাঁর আসল মা–বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি, বাসার মিয়া ও খোদেজা বেগমও যখন নিশ্চিত হলেন, এই তাঁদের সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলে—সে মুহূর্তে উপস্থিত কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

গতকাল শুক্রবার মা-ছেলে দুজনই একে অপরকে দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন। স্টুডিওতে এ সময় আবেগঘন একটি মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সবুজ তাঁর মা–বাবার সঙ্গে চাঁদপুরের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

২০০৪ সালে ৪ এপ্রিল সবুজ তাঁর দাদা লাল মিয়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাতে ফুফু এবং খালার বাসায় বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার পথে হারিয়ে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর অপেক্ষার পর বাবা–মার বুকে ছেলে ফিরে এসেছে আরেক এপ্রিলেই।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সবুজ তাঁর দাদা লাল মিয়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাতে ফুফু এবং খালার বাসায় বেড়াতে যান। খালার বাসায় কয়েক দিন থাকার পর তাঁরা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে ডেমরায় দাদা-নাতির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দিনটি ছিল ৪ এপ্রিল, এখনো মনে আছে সবুজের মা-বাবার। ছেলে ফিরে এল আরেক এপ্রিলেই। মাঝে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সবুজ নিখোঁজ ছিলেন। অনুষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সেদিন হারিয়ে যাওয়ার পর একা বসে বসে সবুজ কাঁদতে থাকেন। তখন এক মুদিদোকানি তাঁকে বাসায় নিয়ে যান। পরদিন তিনি ডেমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তাঁকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসেন।

এদিকে সবুজের পরিবারের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় থানা-পুলিশ ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর কাছে সবুজকে হস্তান্তর করে। এনজিওটি কয়েক মাস তাদের কাছে রেখে সবুজের পরিবারের সন্ধান করে। সন্ধান না পেয়ে আরেক বেসরকারি এনজিও ‘ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেন’-এর কাছে ২০০৫ সালে হস্তান্তর করে।

সবুজ যখন নিশ্চিত হন, তাঁর আসল মা–বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি, বাসার মিয়া ও খোদেজা বেগমও যখন নিশ্চিত হলেন, এই তাঁদের সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলে—সে মুহূর্তে উপস্থিত কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি
ছবি: সংগৃহীত

ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেনের পরিচালক শিখা বিশ্বাস বলেন, ‘সবুজ অনেক মেধাবী ছাত্র। তাই স্থানীয় স্পনসরের সহযোগিতায় আমরা তাঁকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমানে সবুজ সিরাজগঞ্জের বেসরকারি খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করছেন।’

সবুজের মামা রাশেদ আলম বলেন, ‘মা–বাবা তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের সন্ধান পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। লকডাউন শেষে দেখা করার কথা থাকলেও আমরা এর মধ্যেই সবুজের সঙ্গে দেখা করি। পরে সে বাবা-মায়ের সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেইলসহ অন্যান্য যোগাযোগ আমি করলেও লকডাউনের কারণে ভিড় না বাড়াতে আমি স্টুডিওতে যাইনি। আমার বড় ভাই মাসুদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’

গতকাল জনপ্রিয় রেডিও উপস্থাপক গোলাম কিবরিয়া সরকার (আরজে কিবরিয়া) ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে সবুজ ও তাঁর হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের একত্র করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফ্যামিলিজ ফর চিলড্রেনের পরিচালক শিখা বিশ্বাস। রেডিও উপস্থাপক কিবরিয়া হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে সহায়তা চেয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান চালু করেছেন।