২ হাজার হেক্টর আমন খেত পানিতে

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে আমনের খেত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নেত্রকোনার কালমাকান্দার কৈলাটি এলাকায়
প্রথম আলো

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চল তৃতীয়বারের মতো প্লাবিত হয়েছে। জেলার সদর, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলার অন্তত ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার ৯০ হেক্টর জমির আমন ধানের চারা তলিয়ে গেছে। এতে করে ফের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

কৃষক, জেলা কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে আবার কখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার বেলা একটার দিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদ-নদীর পানি বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্ট ছাড়া এখনো অন্যান্য নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে জেলায় বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে দুর্গাপুর ও পূর্বধলার জারিয়ায়। দুর্গাপুরে ১১৮ মিলিমিটার আর জারিয়ায় ৫২ মিলিমিটার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, জেলায় চার লাখের মতো কৃষক পরিবার আছে। এ বছর ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। পানিতে নিমজ্জিত ২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে কলমাকান্দায় ৬৩০, বারহাট্টায় ৪২০, সদরে ৩৪০ হেক্টর জমি রয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের কৃষক আক্কাছ মিয়া জানান, পরপর তিনবারের বন্যার পানিতে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এখন ধারদেনা করে ২৫ কাঠা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে কীভাবে সারা বছর চলবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

ওই উপজেলার ঘনিচা গ্রামের কৃষক তারা মিয়া জানান, তাঁর দুই একর জমিতে রোপণ করা প্রায় এক একর আমন ধান তলিয়ে গেছে। এখন নতুন করে আর ধান রোপণের সময় নেই। কৃষিকাজ ছাড়া তাঁর অন্য কোনো পেশাও নেই। বন্যার ক্ষতি তাঁকে সারা বছর বয়ে বেড়াতে হবে।

এদিকে, পানিতে নেত্রকোনা-সিধলী-কলমাকান্দা সড়কের রাজাপুরসহ কলমাকান্দার রংছাতি, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, কৈলাটি, পোগলা, খারনৈসহ বেশ কয়েকটি এলাকার গ্রামীণ রাস্তা ডুবে গেছে। কলমাকান্দা, বারহাট্টাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রায় ১১০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গত দুবারের বন্যায় জেলার ৩ হাজার ৪০৯টি পুকুরের মাছ ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় ৩ হাজার ১৭৭ জন খামারি। তাঁদের অনেকেই ধার-দেনা করে মাছ চাষ করছিলেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাদির জানান, বন্যার পানিতে ৮৮৯ দশমিক ৯৪ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া, পোনা ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।