২০ বছর ধরে ধুঁকছেন তাঁরা

উপজেলার ভগবানপুর মাঠে প্রায় ৬০০ একর জমি বছরের ৯ মাস জলাবদ্ধ থাকে। পানিনিষ্কাশনের পথে পুকুর করায় এমন অবস্থা হয়েছে।

পানিনিষ্কাশনের পথ না থাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে কৃষিজমিতে। এ কারণে চাষ করতে পারছেন না কৃষকেরা। গত শুক্রবার নওগাঁর বদলগাছীর ভগবানপুর মাঠে।
ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ভগবানপুর দেওয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুখু মিয়া (৬০)। পারসোমবাড়ী বাজারসংলগ্ন ভগবানপুর মাঠে তাঁর তিন বিঘা জমিতে সারা বছর চাষাবাদ করে একসময় ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। কিন্তু ২০ বছর ধরে মাঠটি জলাবদ্ধ। কৃষিজমি থাকলেও সেখানে চাষাবাদ করে উপার্জন করতে না পারায় দুখু মিয়া ও তাঁর ছেলে-নাতিদের এখন দিন মজুরির কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

ভগবানপুর গ্রামের বেশ কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে অন্তত ১ হাজার কৃষকের প্রায় ৬০০ একর জমি আছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই এই মাঠ ছাড়া অন্য কোথাও জমি নেই। ২০ বছর ধরে মাঠটি বছরের ৯-১০ মাসই জলাবদ্ধ থাকে। যে দু-তিন মাস পানি থাকে না, সে সময়টুকুতে মরিচ, পটোল, পাট, করলাসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেন কৃষকেরা। কখনো কখনো সারা বছরই মাঠের পানিনিষ্কাশন বন্ধ থাকে।

গত শুক্রবার ভগবানপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের চারপাশে সড়ক। মাঠ থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভগবানপুর দেওয়ানপাড়া-কলিপাড়া সড়কের একটি অংশে ছয় ইঞ্চির একটি প্লাস্টিকের পাইপ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ভগবানপুর মাঠের পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য ভগবানপুর কলিপাড়ার ভেতর দিয়ে একটি নালা আছে। নালার মুখে আছে একটি ডোবা। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম, আজাদ, বাবুসহ কয়েকজন ২০০০ সালে সে ডোবায় পুকুর খনন করেন। এরপর থেকেই মূলত ভগবানপুর মাঠে জলাবদ্ধতার শুরু।

ভগবানপুর দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল কবীর বলেন, ২ জুলাই ভগবানপুর মাঠে জমি রয়েছে এমন শতাধিক কৃষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুকুরের পাড় কেটে দিতে যান। তখন ওই পুকুরের মালিকেরা কৃষকদের বাধা দেন। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধার উপক্রম হয়। নালার মুখে পুকুর খননের বিষয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ওই পুকুরের মালিক কয়েকজন। আগেও সেখানে পুকুর ছিল। ২০-২১ বছর আগে পুকুরের মালিকেরা মাছ চাষের জন্য চারপাশ উঁচু করেন।

আরিফুল আরও বলেন, ‘নিজের জমিতে কী পুকুরও করতে পারব না? কারও সমস্যা হয়ে থাকলে আরও অনেক পথ আছে।’

বদলগাছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।