২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ইউনিট চালুর পরিকল্পনা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা ও নিশানবাড়িয়া মৌজায় বাংলাদেশ-চীন যৌথ মালিকানায় নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট একই বছরের আগস্ট মাসে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। করোনায় কর্মকাণ্ড কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে।

রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. সেলিম ভূঁইয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ নিয়ে তথ্য তুলে ধরেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সম্মেলনকক্ষে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) প্রকল্প পরিচালক মো. তৌফিক ইসলাম, আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কিউআই ইউ, একই সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মি মিং প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পুরো চিত্রও তুলে ধরা হয়।

নির্বাহী পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া আরও বলেন, সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জ্বালানিসহ মোট ২ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে লোন্দা ও নিশানবাড়িয়া মৌজায় ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর জমির ওপর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করার আগে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরামর্শক নিয়োগ করে পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০১৭ সালের ২ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ছাড়পত্রও প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএলের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করলেও চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৯ মে এ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে আরপিসিএল ও নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ইউএসডি ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে প্রদান করবে।

এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে পাঁচটি ধাপে ২০১৯ সালের মধ্যে ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ও ভূমি অধিগ্রহণের পর ভূমি সুরক্ষাসহ ভূমি উন্নয়নকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে ৩০ একর ভূমিতে দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে ২৮১টি বাড়ি, মসজিদ, স্কুল, ক্লিনিক, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার, খেলার মাঠ, কবরস্থান, পুকুর ইত্যাদি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে এর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এ বছরের মার্চ মাসের মধ্যে বাস্তুচ্যুত পরিবারের সদস্যদের কাছে নতুন বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালের ২৬ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বয়লার, স্টিম টারবাইন ও জেনারেটর নির্মাণে ঠিকাদার কর্তৃক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে, যার অধিকাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং শেষ পর্যায়ে এবং ২০২১ সালের মে মাস থেকে পরবর্তী ৮ মাসের মধ্যে প্রধান যন্ত্রপাতিসমূহের ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশন সম্পন্ন হবে। বর্তমানে পাইলিংসহ মালামাল হ্যান্ডলিং জেটি, একসেস রোডসহ প্রকল্পের কার্যালয় ও আবাসনসুবিধার নির্মাণকাজ চলমান। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, যাতে কয়লা পোড়ানোর ফলে ক্ষতিকর পদার্থের নিঃসরণ তুলনামূলক কম হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রটি হবে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব। এর কোনো ছাই বা ধোঁয়া পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এতে ২২০ মিটার উঁচু চিমনি থাকবে। এ ছাড়া থাকবে অ্যাশপন্ড, যেখানে ৯৯ ভাগ ফ্লাইঅ্যাশ বয়লার টিউবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং ফ্লাইঅ্যাশ স্থানীয় বাজারে চাহিদা থাকায় বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।