২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই নৌকার আরেক কর্মী খুন

ঝিনাইদহের শৈলকুপার সারুটিয়া ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত জসিম উদ্দিনের স্বজনদের আহাজারি।
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর আরও এক কর্মী খুন হয়েছেন। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ভাটবাড়িয়া গ্রামে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন ছুরিকাঘাতে তাঁকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিহত ব্যক্তির নাম জসিম উদ্দিন (৩২)। তিনি সারুটিয়া ইউনিয়নের ভাটবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে। একই ঘটনায় ওই গ্রামের আবদুস শহিদের ছেলে মিলন হোসেন (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য শৈলকুপা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সারুটিয়া ইউপি নির্বাচনের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে হারান আলী (৬৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি ওই ইউপি নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের কর্মী ছিলেন।

পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারি সারুটিয়া ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস প্রতীক) হয়েছেন জুলফিকার কায়সার। তিনি শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সারুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত হয়েছেন।

প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় দুজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। আজ শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপার সারুটিয়া ইউপিতে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জসিম উদ্দিন ও মিলন হোসেন তাঁদের বাড়ির পাশে একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। এমন সময় বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার কায়সারের ৭-৮ জন কর্মী হামলা করে দুজনকে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে যান। গ্রামবাসী তাঁদের উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে নেওয়ার পর জসিম উদ্দিন মারা যান। মিলন হোসেন সেখানে চিকিৎসাধীন।

নিহত জসিম উদ্দিনের স্বজনেরা বলেন, তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন তিনি। সম্প্রতি নির্বাচন উপলক্ষে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও তিন বছর বয়সের শারীরিক প্রতিবন্ধী এক ছেলে রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নিয়ে সেখানেই থাকেন।

এর আগে শনিবার বেলা একটার দিকে সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে আসেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মো. নজরুল ইসলাম। শুক্রবার ঘটে যাওয়া ঘটনাস্থল ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি বাজারে যান। এরপর শৈলকুপা থানায় ফেরেন। পরে তিনি খুলনায় ফিরে যান। এ সময় ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলামসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এই ইউনিয়নে যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ছাড় পাবেন না।

নৌকার প্রার্থী মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করেন, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষের লোকজন এভাবে একের পর এক তাঁর কর্মী-সমর্থকদের হত্যা করছেন। তাঁরা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চান। তিনি বলেন, তাঁর কর্মী ও সমর্থকদের অপরাধ, তাঁরা নৌকার লোক। তাই তাঁদের ওপর এভাবে হামলা করা হচ্ছে। বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তিনি এসবের বিচার দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন

বিদ্রোহী প্রার্থী জুলফিকার কায়সার দাবি করেন, শুক্রবারের ঘটনায় যে বৃদ্ধ লোকটি মারা গেছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে তিনি দাবি করেন। ওই ঘটনা, এমনকি শনিবারের ঘটনার সঙ্গেও তাঁর কোনো লোক জড়িত নন। যে ছুরিকাঘাত করেছেন, তিনি কোনো প্রার্থীর লোক নন, তিনি সন্ত্রাসী। কী কারণে এই হত্যা করেছেন, তা তদন্ত করলে বেরিয়ে যাবে।

ঝিনাইদহের সহকারী পুলিশ সুপার (শৈলকুপা সার্কেল) অমিত কুমার বর্মণ বলেন, শুক্রবারের ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। কেউ এখনো মামলা করতে থানায় আসেননি। শনিবারের ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলার ইউপি নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। শৈলকুপা উপজেলার ১৪টি ও হরিনাকুন্ডু উপজেলার ৮টি ইউপির ভোট গ্রহণ ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।