২৫ বছর ধরে সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছেন ভক্ত হীরা শাহ

২৫ বছর ধরে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন তাঁর ভক্ত হীরা শাহ। সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধরমপাশা মড়লপাড়া গ্রামে
ছবি: সালেহ আহমদ

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধরমপাশা মড়লপাড়া গ্রামে ২৫ বছর ধরে চলচ্চিত্রের প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা ও সালমান শাহর ভক্ত মাহবুবু হাসান ওরফে হীরা শাহ (৩৮) এই মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন। এ কাজে পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

হীরা শাহ বলেন, ১৯৯৩ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ভিসিডিতে (ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার) ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছায়াছবি দেখে নায়ক সালমান শাহের প্রেমে পড়ে যান। সালমানের দুচোখের তাকানোর ভাব, হাঁটাচলা, কথা বলার স্টাইল—সবকিছুই তিনি অনুসরণ করতে শুরু করেন। তবে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর মনটা ভেঙে যায়। এরপর থেকে মা–বাবা ও পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে সালমান শাহকে স্মরণ করে ও ভালোবেসে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন।

নায়ক সালমান শাহ অভিনীত ২৭টি ছবিই হীরা শাহ দেখেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সালমান শাহর প্রথম ছবি দেখেই নিজেকে নায়ক হিসেবে দেখার স্বপ্ন শুরু হয়। ১০ বছর ধরে আমি নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করছি। এখন পর্যন্ত ২২টি নাটক ও ১২টি বাংলা ছায়াছবিতে অভিনয় করেছি। নায়ক হিসেবে অভিনয় করার সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। আমার অভিনীত নাটক ও সিনেমার বেশির ভাগ চরিত্রেই খলনায়ক হিসেবে। তবে নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন এখনো থেমে যায়নি। আমার প্রিয় খলনায়ক হুমায়ুন ফরীদি ও রাজীব।’

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ধরমপাশা মড়লপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হীরার বাড়ির বৈঠক ঘরের বারান্দায় টেবিলে ওপর সালমান শাহর বাঁধাই করে ছবি রাখা। সেই ছবির পাশে হীরা শাহ দাঁড়িয়ে আছেন। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে কুশল বিনিময় করেছেন। যাঁরা আসছেন, তাঁদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন করে বিদায় দিচ্ছেন হীরা। মৃত্যুর এই দিনে প্রিয় নায়ককে স্মরণ করে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়াও করছেন তিনি।

হীরা শাহর ছোট ভাই শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমার বড় ভাই নায়ক সালমান শাহর একনিষ্ঠ ভক্ত। নায়কের সবকিছুই তিনি অনুকরণ করেন। প্রতিবছর ৬ সেপ্টেম্বর এলে সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনে আমরা পারিবারিকভাবে তাঁকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি। সালমান শাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য শিশু থেকে শুরু করে এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ বড় ভাইকে নায়ক হীরা শাহ বলে ডাকে। এতে আমাদের ভালোই লাগে।’

হীরা শাহর মা মিনারা বেগম বলেন, ‘নায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর আমার ছেলে হীরার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। সে ঠিকমতো খেতে পারত না, ঘুমাতে পারত না, পড়াশোনা করতে পারত না। ছেলের এই কাণ্ড দেখে সালমান শাহর বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিউকার্ড কিনে দিয়েছিলাম। এখনো নায়কের প্রতি তার ভালোবাসা কমেনি। আমার ছেলের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য এবং ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুবায়ের পাশা ওরফে হিমু বলেন, হীরা শাহ এলাকার গর্ব। ছোট–বড় সবাই তাঁকে নায়ক সালমান শাহর ভক্ত হিসেবেই চেনেন। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি পারিবারিকভাবে সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন। নায়ক সালমানভক্ত ও চলচ্চিত্রপ্রেমী হীরা শাহর নায়ক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হোক, এটাই প্রত্যাশা।