২৭ বছর আগের কর্মস্থলে এসে স্মৃতি রোমন্থন সচিবের

সেই সময়কার কর্মস্থল উপজেলা আদালত ঘুরে দেখছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান
প্রথম আলো

প্রায় ২৮ বছর আগে উপজেলা আদালত চত্বরে লাগানো বটগাছটি এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। ডালপালা মেলেছে চারদিকে। একসময় যে বাসায় তাঁর দিন–রাত কেটেছে, সেখানে এখন বসবাস করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এলাকার রাস্তাঘাট আগে ভালো ছিল না, এখন নতুন রাস্তা হয়েছে।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন মো. শহিদুজ্জামান। এখন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব। ২৭ বছর পর শনিবার তিনি আগের কর্মস্থলে সফরে এসে স্মৃতি রোমন্থন করেন। নিজে ঘুরে দেখেন একসময়কার কর্মস্থল, ঘুরে দেখান স্ত্রী–সন্তানদেরও।

শনিবার আক্কেলপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয় পরিদর্শনে এসেছিলেন সচিব শহিদুজ্জামান। স্ত্রী ও দুই পুত্রসন্তান তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় পরির্দশন শেষে সরাসরি চলে আসেন উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে। তাঁর আসার খবরে সেই সময়কার তাঁর অফিসের সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীরাও জড়ো হয়েছিলেন। সচিব শহিদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী সাবেক কর্মস্থল ও কর্মচারীদের দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সচিব শহিদুজ্জামান সেই সময়কার অফিসের সব কর্মচারী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় বলতে থাকেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য ঠিক যেন ফিরে যান ২৯ বছর আগের সেই সোনালি দিনগুলোয়। তিনি একের পর এক এখানকার অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন।

২৯ বছর পর স্যার এলেন স্যার হয়তো নাম ধরে ডাকা তো দূরের কথা আমাদের কাউকে চিনতেই পারবেন না বলে ভেবেছিলাম। আমাদের সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
সামছুল ইসলাম, উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারী

শহিদুজ্জামান সেই সময়ে পরিবার নিয়ে উপজেলা পরিষদের সরকারি বাসায় থাকতেন। এখন সেই বাসায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকেন। ২৯ বছর পর তিনি স্ত্রী-সন্তানদের সেই বাসাটির প্রতিটি কক্ষ ঘুরে দেখালেন। স্ত্রী–সন্তানদের সঙ্গে এলেন উপজেলা আদালতে কার্যালয়ে, সেখানে দিনের বেশির ভাগ সময় দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছিলেন। তখনকার আদালত চত্বরে প্রতিটি কক্ষ ঘুরে দেখেন। আদালতের কক্ষগুলো এখন সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় ও পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আদালত চত্বরে বটগাছ লাগিয়েছিলেন। আজ সেই বটগাছটি ডালপালায় ছেয়ে গেছে। নিজ হাতে লাগানো গাছটি বিশাল আকার দেখে নিজেও আনন্দিত হন।

সচিব শহিদুজ্জামান বলেন, ‘রাস্তাঘাট তেমন ভালো ছিল না। এখন রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। এসব পরিবর্তন দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। এখানকার মানুষ অনেক ভালো। এখানকার অনেক স্মৃতি রয়েছে।’

সেই সময়কার কর্মচারী সামছুল ইসলাম বলেন, ‘২৯ বছর পর স্যার এলেন স্যার হয়তো নাম ধরে ডাকা তো দূরের কথা আমাদের কাউকে চিনতেই পারবেন না বলে ভেবেছিলাম। আমাদের সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সবাইকে চিনেছেন এবং নাম ধরে ডেকেছেন। স্যার খুব ভালো মানুষ।’

আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর ঘুরে দেখছেন সচিব শহিদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানেরা
প্রথম আলো

সেই সময় তেমন বিদ্যুৎ থাকত না। উপজেলার কলেজ বাজারের টেকনিশিয়ান শফিউল আলম শহিদুজ্জামানকে তখন আইপিএস বানিয়ে দিয়েছিলেন। শফিউল বলেন, ‘স্যার আমাকে দেখে বললেন, “শফি সাহেব আপনি তো আমাকে একটা আইপিএস বানিয়ে দিয়েছিলেন।” ম্যাজিস্ট্রেট থেকে সচিব হয়েছেন। আজও সেই কর্মস্থল আক্কেলপুর ও এলাকার মানুষদের কথা ভুলতে পারেননি। এটা বিরল ঘটনা।’

ইউএনও এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, সচিব শহিদুজ্জামান ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তিনি কর্মস্থলকে আপন করে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া এত দিন পর অফিসের কর্মচারী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নাম মনে রেখেছেন।

এর আগে শনিবার সরাসরি আক্কেলপুর পৌর শহরের নবাবগঞ্জ সেতুর পূর্ব পাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম, আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ, ইউএনও এস এম হাবিবুল হাসান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ খান, জয়পুরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ছানাউল হক, আক্কেলপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা ময়েন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।