২৮০ কর্মচারীকে দেওয়া হচ্ছে অর্ধেক মজুরি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফাইল ছবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ২৮০ জন কর্মচারীকে অর্ধেক মজুরি দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ মজুরিও অনেকের বাকি পড়েছে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার ওই শ্রমিকদের নিয়োগকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মজুরিভিত্তিক কয়েকজন কর্মচারী বলেন, করোনার প্রকোপ যখন বেশি ছিল, তখন সরকারি কর্মচারীদের ছুটি থাকলেও তাঁদের ছিল না। জীবনের মায়া না করে টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের করোনা হলে প্রণোদনা রয়েছে। কিন্তু তাঁদের জন্য কিছুই করা হয়নি। এমনকি মজুরির টাকাও কম পাচ্ছেন।

করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন একজন কর্মচারী বলেন, তিনি আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁরা শুনেছেন, করোনায় আক্রান্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তাঁরা সে খাবারও পাননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতি অর্থবছরের শুরুতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি থাকায় তাঁদের দিয়ে ওয়ার্ড বয়, আয়া, ক্লিনার ও ট্রলিম্যানের কাজও করানো হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসব কর্মচারী দেওয়ার কাজ পায় কুষ্টিয়ার টিএসএল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এটির মালিক মো. সাইফুদ দৌলা।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য দিনে বরাদ্দ ২০০ টাকা। এখান থেকে মূল্য সংযোজন ও আয়কর বাদে একজন কর্মীর ১৫৬ টাকা পাওয়া কথা। প্রতি মাসের মজুরি একসঙ্গে দেওয়া হয়। সে হিসাবে ৩০ দিনের মজুরি হয় ৪ হাজার ৬৮০ টাকা। আর ৩১ দিনের মজুরি হয় ৪ হাজার ৮৩৬ টাকা।

কর্মচারীদের ভাষ্য, ২০১১ সাল থেকে কোনো দিনই তাঁরা পুরো মজুরি পাননি। কোনো মাসে তাঁদের দেড় হাজার, কোনো মাসে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়। কোনো মাসে কোনো কোনো কর্মচারীকে টাকাই দেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মচারী বলেন, তাঁর এখনো সাত মাসের পাওনা বাকি। ঈদের সময় মজুরি দেওয়া হয়নি—এ রকমও হয়েছে। ঠিকাদার এমন ভাব করেন যেন তাঁরা ভিক্ষা চাইতে গেছেন। একজন নারী কর্মচারী বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁদের দিয়ে শৌচাগার পরিষ্কারের কাজও করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবু ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না তাঁরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বরের আগে প্রায় তিন বছর হাসপাতালটির পরিচালক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান। তিনি ঠিকাদারকে কর্মচারীদের গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সাড়ে চার হাজার টাকা করে মজুরি দিতে বাধ্য করেন। ঠিকমতো মজুরি না দেওয়ার অভিযোগে তিনি অক্টোবরে ঠিকাদারকে চিঠি দেন। এরপরও অক্টোবরে মজুরি কম দেওয়া হয়।

১৯ নভেম্বর অক্টোবরের মজুরি দেওয়া হয়। সেদিন কর্মচারীদের হাতে আড়াই হাজার করে টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা কম বেতন নিতে রাজি না হলে পুলিশ ডাকা হয়। তাঁদের বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে কর্মচারী সে টাকাই নেন।

নগরের ঘোষপাড়া এলাকায় সাইনবোর্ডহীন একটি কার্যালয় থেকে ওই মজুরি দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে সব কর্মচারী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বেতন নিচ্ছিলেন। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপস্থিত মো. জানে আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি ৫ টাকায় লোক খাটাতে পারি, তাহলে ১০ টাকার লোক কেন রাখব।’

কর্মচারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীশ ইয়াজদানী ঠিকাদারকে গত মঙ্গলবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। গত বুধবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১ হাজার ২০০। রোগী থাকে আড়াই থেকে তিন হাজার। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি রয়েছে ২০৯ জন। এ অবস্থায় দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী নিতেই হবে। প্রয়োজনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মচারী নেওয়া হবে। তিনি মজুরি সমস্যার সমাধান করতে চান।