৩ দিন পর সূর্যের দেখা, লোনাজলে শরীর ভিজিয়ে পর্যটকদের ইচ্ছেপূরণ

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পর্যটকের ভিড়। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা। সমুদ্রে তখন ভাটা শুরু। ভাটার সময় সমুদ্রে গোসলে নামা নিষেধ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ভ্রমণে আসা ঠিকাদার মাসুদ কামাল সাগরে নামলেন।

লাইফগার্ডের একজন কর্মী তাঁকে থামিয়ে বললেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। গোসলে নামলে গভীর সাগরে ভেসে যেতে পারেন। একটু দূরে গুপ্ত খালও আছে। খালে আটকা পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। আপনি দ্রুত উঠে আসুন।’

কথা শুনে হতবাক মাসুদ কামাল। তিনি বললেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি তো নাই, আকাশে সূর্য উঠেছে। তা ছাড়া আমার সাঁতার জানা আছে, গোসলে সমস্যা হবে না,’ এই বলে ঝাঁপ দিলেন সাগরে। টানা আধঘণ্টা লোনাজলে শরীর ভিজিয়ে উঠে এলেন কূলের বালুচরে।
গত রোববার সকালে মাসুদ কামাল চার বন্ধু মিলে কক্সবাজারে এসেছেন। গাড়ি থেকে নেমেই বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ায় আটকা পড়েন তাঁরা।

মাসুদ কামাল বললেন, ‘আজ মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরে যাব সবাই, তার আগে লোনাজলে শরীর ভেজানোর ইচ্ছেটা পূরণ করে নিলাম।’

সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জড়ো হন অন্তত ৫ হাজার পর্যটক। কমবেশি সবাই লোনাজলে শরীর ভিজিয়ে ইচ্ছে পূরণ করছেন। যদিও বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় গোসলে নামতে নিষেধ করে বালুচরে সাত-আটটি লাল নিশানা লাগানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ ও নিম্নচাপের প্রভাবে তিন দিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারছেন না পর্যটকেরা। নৌযানে চড়ে যেতে পারছেন না মহেশখালী, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ায়। আজ সকালটা শুরু হয় বৃষ্টি দিয়ে। তবে সকাল ১০টার দিকে মেঘ সরে উঁকি দেয় সূর্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে হোটেলকক্ষে বন্দী পর্যটকেরা বাইরে বের হন, ছুটছেন টেকনাফ, ইনানী সৈকত, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে। তবে বেশির ভাগ পর্যটকের চাহিদা সমুদ্রসৈকত। তাঁরা সুগন্ধা পয়েন্টে নেমেই লোনাজলে শরীর ভেজাতে আগ্রহী বেশি।

ঢেউয়ের টানে ভেসে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফ গার্ডের ব্যবস্থাপক সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, সকাল ১০টার দিকে সূর্যের মুখ দেখে পর্যটকেরা সৈকতে ভিড় করতে শুরু করেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সৈকতে পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। এর মধ্যে অন্তত ২ হাজার পর্যটক সমুদ্রের লোনাজলে শরীর ভিজিয়েছেন। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল। ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে গোসলে নামতে নিষেধ করে লাল নিশানা টানানোর পাশাপাশি চলছে প্রচার। কিন্তু অনেকে মানছেন না এই নিষেধাজ্ঞা।

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৈরী পরিবেশ ও বৃষ্টির কারণে সোমবার রাতের বাসে অন্তত ৩ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ত্যাগ করেছেন। এখন সৈকত এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে অবস্থান করছেন ৮ হাজার পর্যটক। সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখে বহু পর্যটক আরও কয়েক দিন থেকে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। নতুন করেও হোটেলকক্ষ বুকিং হচ্ছে। তিন দিন ধরে বন্ধ সেন্ট মার্টিনের জাহাজ চলাচল শুরু হলে পর্যটকের আগমন আবার দ্রুত বেড়ে যাবে।

হোটেলের মালিকেরা বলেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং করা আছে। বৈরী পরিবেশের কারণে কিছু কক্ষের অগ্রিম বুকিং বাতিল হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নতুন বুকিংও আসছে। ১৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০ শতাংশ হোটেল কক্ষ অগ্রিম বুকিং আছে। ১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্ষ বুকিং আছে ৮০ শতাংশ। সৈকতের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউসের দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা আছে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমদ বলেন, প্রতিদিন রাতে গ্রিন লাইনের ১২টি বাসে চার শতাধিক পর্যটক কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে সে পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজার আসছেন না, এর কারণ বৈরী পরিস্থিতি।