৩০ কোটি টাকার সার গায়েব, তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

যমুনা সার কারখানার মূল ফটক
ফাইল ছবি

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (জেএফসিএল) প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের সার গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তদন্তে সত্যতা মেলায় কারখানাটির তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন আরও ছয়জন।

বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন যমুনা সার কারখানার সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) খোকন চন্দ্র দাস, ইউরিয়া অ্যান্ড ব্যাগিং বিভাগে কর্মরত উপপ্রধান রসায়নবিদ মো. নজরুল ইসলাম এবং ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ও বিক্রয় শাখার প্রধান ওয়ায়েছুর রহমান। তাঁদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ এবং প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করেছে বিসিআইসি।

গত ১৮ নভেম্বর বিসিআইসির চেয়ারম্যান (গ্রেড–১) শাহ মো. ইমদাদুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। চিঠিতে এই তিন কর্মকর্তাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অন্য কোনো যথোপযুক্ত শাস্তি আরোপ করা হবে না, তা ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কারখানার সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মঈনুল হক, কারিগরি শাখার মহাব্যবস্থাপক বিনান্ত কুমার বৈরাগী, অতিরিক্ত প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মাহবুব উল আলম, বর্তমানে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) গোলাম কিবরিয়া ফকির, উপপ্রধান হিসাবরক্ষক (হিসাব ও অর্থ) মো. সুরুজ্জামান ও সহকারী প্রকৌশলী (পুর) সিদ্দিকুর রহমানকে গত ২৪ নভেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের চিঠি পাওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের এপিএ, শুদ্ধাচার ও অভিযোগ নিষ্পত্তি অধিশাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর যমুনা সার কারখানার প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের ২০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য বিসিআইসিকে জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিসিআইসি ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেএফসিএলের উৎপাদিত সারের মজুত হিসাব বাণিজ্যিক বিভাগের অধীন বিক্রয় শাখা থেকে সংগ্রহ করে। বিক্রয় শাখার প্রধান স্বাক্ষরিত তথ্য অনুযায়ী গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেএফসিএলের উৎপাদিত ব্যাগ সারের মজুতের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন ও লুজ সারের পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন। কিন্তু তদন্ত কমিটি একই দিন সরেজমিন উৎপাদিত ব্যাগ সারের মজুতের পরিমাণ ২১ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন এবং লুজ সারের পরিমাণ ৫১ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন পেয়েছে। অর্থাৎ বিক্রয় শাখার প্রধানের প্রদত্ত তথ্যের সঙ্গে বাস্তব গণনায় কোনো মিল পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে জেএফসিএলের ব্যাগ সার ১৬ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টক, এসএফসিএলের সার ১২১ মেট্রিক টন এবং লুজ সার ২১৬ মেট্রিক টনসহ মোট ১৬ হাজার ৬০২ মেট্রিক টন সার পাওয়া যায়নি। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৩ কোটি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮২০ টাকা।

একই তারিখে বিক্রয় শাখা থেকে জানানো হয়, জেএফসিএলের ২ নম্বর গুদামে কাফকো সার ১ হাজার ১১৩ মেট্রিক টন এবং আমদানি সার ২ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি বাস্তব গণনায় আমদানি সার ১ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন এবং কাফকো সার ১ হাজার ২৩ মেট্রিক টনসহ মোট ২ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন সার কম পায়। যার আর্থিক মূল্য ৭ কোটি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৬ টাকা। এই কর্মকর্তাদের দুই গুদামের মোট ১৯ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন সারের মূল্য বাবদ ৩০ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৬ টাকা পারস্পরিক যোগসাজশে আত্মসাৎ করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কারখানার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ও বিক্রয় শাখার প্রধান ওয়ায়েছুর রহমান বলেন, বৃষ্টিতে পচে–গলে সার নষ্ট হয়ে গেছে। এর দায়ভার এখন তাঁদের ওপর চাপানো হচ্ছে। দু–এক দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দেবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদীপ মজুমদারের মুঠোফোনে শুক্র ও শনিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। দপ্তরে গিয়ে কথা বলতে চাইলে অফিস সহকারী জানান, তিনি সভায় আছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।

কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্বে) মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ কোটি টাকার সার আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও ছয় কর্মকর্তাকে জবাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে জবাব পাঠানো হবে।