৩২ বছরের বাঁধে জোড়াতালি, ঝুঁকিতে ১১টি স্থান

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধের ধসে পড়া স্থানে বালুর বস্তা ফেলেছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। বেড়িবাঁধটির জনতাবাজার ও আমিরাবাদ এলাকার মধ্যবর্তী স্থান থেকে আজ সোমবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল ৩২ বছর আগে। কিন্তু এ পর্যন্ত হয়নি এর বড় ধরনের সংস্কার। এরই মধ্যে বাঁধটির অন্তত ১১টি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার রাতে বাঁধটির আমিরাবাদ এলাকায় ৮০ মিটার অংশ ধসে পড়ে। বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হলেও বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা রয়েই গেছে।

এই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করার দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের সেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, বাঁধটিতে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে বাঁধটি ভালোভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না।

চাঁদপুর পাউবোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ও স্থানীয় লোকজনকে বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে ১৯৭৯ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৮৮ সালে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি নির্মাণ করে। প্রায় ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধটির ভেতরে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার হেক্টর। ৬১ কিলোমিটার বাঁধে পাথরের ব্লক বসানো হয়েছে ১৫ কিলোমিটারে। বাকি ৪৬ কিলোমিটার বাঁধ কাঁচা।

চাঁদপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন ও মো. আলমাস আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়িবাঁধটির সুগন্ধি, শিকিরচর, সন্তোষপুর, সিপাইকান্দি, ঠেটালিয়া, গাজীপুর, চরমাছুয়া, আমিরাবাদ, টরকী, এখলাশপুর ও মোহনপুর এলাকা চার-পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিতে। প্রতি বর্ষার মতো এবারও নদীর পানির তোড়ে এসব স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। আশঙ্কা রয়েছে যেকোনো সময় ধসে পড়ার। এসব এলাকায় গত বছর ও এ বছর বাঁধের কিছু সংস্কারকাজ হলেও ঝুঁকি এড়ানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়।

বাঁধের ধসে পড়া স্থান সংস্কার করতে আনা হয় বালুর বস্তা। ২১ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো

গত শনিবার কথা হয় ঝুঁকিপূর্ণ আমিরাবাদ এলাকার জেলে আবুল কালাম, কৃষক রেজা উদ্দিন মো. হাসেম ও মো. সাইজ উদ্দিন, গাজীপুর এলাকার কৃষক মোস্তফা মৃধা ফয়েজ আহম্মেদ, সুরুজ মিয়া, আজিজ পাটোয়ারী ও চরমাছুয়ার ইব্রাহিম মিজির সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় বেড়িবাঁধটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর পানির চাপে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। সেখানকার কিছু অংশ ধসে পড়েছে এবং দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। পাউবো বালুর কিছু বস্তা ফেললেও এসব স্থান এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে তাঁদের ঘরবাড়ি, মাছের খামার ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

সেচ প্রকল্পটির ফতেপুর, ঠেটালিয়া ও সিপাইকান্দি এলাকার পানি ব্যবহারকারী দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী বলেন, গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাঁধটির সিপাইকান্দি, ঠেটালিয়া, এখলাশপুর, মোহনপুর ও শিকিরচর এলাকার বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকমে মেরামত করা হয় এসব স্থান। এসব এলাকায় কোনো স্থাপনা না থাকায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে বাঁধটির জনতাবাজার ও আমিরাবাদ এলাকার মধ্যবর্তী ৮০ মিটার এলাকা মেঘনার পানির চাপে ধসে পড়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কৃষক ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে নির্মাণের পর থেকে অদ্যাবধি বেড়িবাঁধটি ভালোভাবে সংস্কার করা হয়নি। ধসে পড়া স্থানগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে। বাঁধটি ভালোভাবে সংস্কার করতে ৪৫৪ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন। ওই টাকার বরাদ্দ চেয়ে গত ১০ মার্চ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেটি ফেরত আসে। আরও যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ করে প্রকল্পটি তৈরি করে ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য পাউবোকে বলা হয়েছে।