৪ দিন আগের লাশের মাথা উদ্ধার হয়নি, মেলেনি ২ বছর আগের মাথাও

লাশ
প্রতীকী ছবি

মাগুরায় এক যুবকের মাথাবিহীন খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের চার দিন পেরিয়ে গেলেও লাশের বাকি অংশের খোঁজ পায়নি পুলিশ। গত রোববার সকালে মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালুকান্দি গ্রামের একটি রাস্তার পাশে ও মজাপুকুর থেকে দুটি বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় দেহের খণ্ডিত দুটি অংশ উদ্ধার করা হয়। এখনো মাথা ও একটি পায়ের খোঁজ মেলেনি।

মাগুরায় দুই বছর আগে একইরকমভাবে আরও এক যুবককে হত্যা করা হয়েছিল। মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের পর পায়ের স্যান্ডেল দেখে তাঁকে শনাক্ত করেছিল পরিবার। তবে ঘটনার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও নিহত যুবকের মাথার সন্ধান পাননি স্বজনেরা। কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়েও কিছু জানতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে গত রোববার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কালুকান্দি গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের খণ্ডিত অংশও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মাথা খুঁজে না পেলেও মরদেহটি মো. আজিজুর রহমান (৩০) নামের এক যুবকের বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বজনেরা। নিহত যুবকের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার সংকোচখালী গ্রামে। তবে তিনি মহম্মদপুর উপজেলার বানিয়াবহু গ্রামে নানা আবুল কাশেমের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। ওই যুবক মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামে বিয়ে করেন। সবশেষ ওই গ্রামেই একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকছিলেন তিনি। পরনে থাকা পোশাক দেখে তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। ওই ঘটনায় গত সোমবার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মহম্মদপুর থানায় হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন নিহত যুবকের ভাই মো. হাবিবুর রহমান।

এ বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহের খণ্ডিত অংশ ও তাঁর সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল, মুঠোফোনের খোঁজ এখনো মেলেনি। এই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সামনে নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। শিগগিরই এই হত্যা রহস্যের জট খুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে দুই বছর আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই যুবকের নাম মো. ইমন হোসেন (২২)। তিনি সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ইসলাম মোল্লার ছেলে। ২০১৯ সালের ২ জুলাই সকালে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পারুয়ারকুল গ্রামের একটি মাঠ থেকে ওই যুবকের মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করলেও পরে মরদেহের পাশে থাকা একটি স্যান্ডেলের সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত করে পরিবার।

ওই ঘটনায় নিহত যুবকের বাবা ইসলাম মোল্লা বাদী হয়ে মহম্মদপুর থানায় অপহরণসহ হত্যা মামলা করেন। সেখানে সিরিজদিয়া গ্রামের মৃত ঠান্ডু ফকিরের ছেলে হুমায়ুন ফকির (২৭), একই গ্রামের লাকু ফকিরের ছেলে অনিক ফকিরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

মাগুরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একবার অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে। তবে বাদীর নারাজির ভিত্তিতে আদালত মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে দিয়েছে।

নিহত ইমনের বাবা ইসলাম মোল্লা প্রথম আলোকে জানান, ‘মাথা ছাড়াই ছেলের লাশটি দাফন করেছিলাম। প্রথমে মাথার আশায় ছিলাম। এখন তাঁর হত্যার সুবিচারের অপেক্ষায় আছি। ডিবি যে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তাতে অনেক ত্রুটি ছিল। কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হলো, কোথায় মাথা আছে, তার কিছুই ছিল না। তাই নারাজি দিয়েছিলাম।’

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন মাগুরা ডিবি পুলিশের এসআই মো. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ওই মামলায় একাধিক সাক্ষী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আসামিরা আদালতে স্বীকার না করলেও মৌখিকভাবে পুলিশকে বলেছিল লাশের মাথা বিনোদপুর সেতুর নিচে নবগঙ্গা নদীতে ফেলেছিলেন তাঁরা। তবে জাল টেনে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি।

মামলাটি এখন তদন্ত করছেন মাগুরা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মো. আকরাম হোসেন। আজ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে অনুমোদনের জন্য সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘নারী ও প্রেমঘটিত দুটি বিষয় নিয়ে খুন হয়েছিলেন ওই যুবক। তিনজন সাক্ষীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ বেশ কিছু প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারে পুলিশ। আশা করছি, ঘটনায় জড়িত আসামিরা কঠিন শাস্তি পাবেন।’ তবে এই মামলায় সব আসামি এখন জামিনে মুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।