৫ শতাধিক পরিবারকে খাবার দিলেন হিরো আলম

হিরো আলম
হিরো আলম

সুন্দরী বেওয়া (৬০) মানুষের বাড়িতে ভিক্ষা করে দিন চালান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লোকজনের চলাচল সীমিত করায় তিনি আর বের হন না। ভিক্ষা বন্ধ। খাবারদাবারও বন্ধ অনেকটা। এই অবস্থায় শেরপুর উপজেলার বনমরিচা গ্রামে তাঁর বাড়িতে ব্যাগভর্তি চাল, ডাল, তেল, লবণ নিয়ে হাজির হন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। প্রতি মাসে বৃদ্ধাকে আর্থিক সহযোগিতা পাঠানোর প্রতিশ্রতিও দেন তিনি।

শুধু সুন্দরী বেওয়া নন, করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়া কর্মহীন শ্রমজীবী ৫ শতাধিক পরিবারের ঘরে ব্যাগভর্তি খাবার পৌঁছে দিয়েছেন হিরো আলম। তিন দিন ধরে বগুড়া সদর, শেরপুর, কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভ্যানে করে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেন তিনি। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে আছে পাঁচ কেজি চাল, আটা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও লবণ।

ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন হিরো আলম। পড়াশোনা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন তিনি। সিডি যখন চলছিল না, তখন কেবল সংযোগ ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসার সুবাদে ২০০৮ সালে নিজেই মিউজিক ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে প্রকাশ করতে শুরু করেন। নায়ক ও নির্দেশক নিজেই। ইউটিউবে ৫ শতাধিক মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।

২০১৬ সালে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে গুগল তথ্য প্রকাশ করে, বলিউড নায়ক সালমান খানের চেয়েও বেশিবার হিরো আলমকে গুগলে খোঁজা হয়েছে। এসব পরিচিত কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। তাঁর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবরও সেই সময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

হিরো আলম এরই মধ্যে ‘মার ছক্কা’ নামে একটি চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বলিউড পরিচালক প্রভাত কুমারের ‘বিজু দ্য হিরো’ নামের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন তিনি। ২০ মার্চ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর চিত্রনাট্যে নির্মিত ‘সাহসী হিরো আলম’ নামের একটি চলচ্চিত্র। এতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সঙ্গে আছেন তিন নায়িকা সাকিরা মৌ, রাবিনা বৃষ্টি ও নুসরাত জাহান। পরে সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছবি মুক্তি স্থগিত করা হয়।

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের (দর্শক) ভালোবাসাতেই আজ আমি হিরো আলম। মানুষ না চাইলে জিরো। করোনাভাইরাসের কারণে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ বেকার। ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। উপার্জন বন্ধ। অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো একজন নাগরিক হিসেবে নৈতিক দায়িত্ব মনে করেছি আমি। এমন দুর্যোগে তাদের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে।’ তিনি এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবান ও চলচ্চিত্র তারকাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।