৫০ বছর বেদখলে থাকা ৫০০ একর জমি চিহ্নিত

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ও অনন্তপুর মৌজায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বেদখল হওয়া প্রায় ৫০০ একর জমি ৫০ বছর পর চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে সেই জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিজানুর রহমান অনন্তপুর মৌজায় ২৬৪ একর ও চৈত্রকোল মৌজায় ২২৯ একর জমিতে সীমানা পিলার দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। দুই মৌজায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে জমি আছে ৬০০ একর।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ সরকার পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৮৯৩.৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে। পরে ভারত থেকে আসা মোহাজের (অবাঙালি) পরিবারগুলোর মধ্যে সেসব জমি বণ্টন করা হয়। উপজেলার চৈত্রকোল ও অনন্তপুর মৌজায় ৩০০ পরিবারের প্রতিটিকে দেওয়া হয় ২ একর করে। শর্ত ছিল, এসব জমি পরিবারগুলোর সদস্যরা কখনো বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করতে পারবেন না। জমির দেখভাল ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে।

পিআইও মিজানুর রহমান বলেন, কালক্রমে পরিবারের সদস্যদের অনেকে মারা গেছেন। আবার কেউ কেউ এলাকা বা দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় অবৈধভাবে জমি বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করেছেন। অনন্তপুর মৌজায় বংশপরম্পরায় এখনো ৩৭টি মোহাজের পরিবার আছে। তাদের অধীনে আছে প্রায় ১০০ একর জমি। প্রতিবছর জমিগুলোর খাজনা সরকারিভাবে দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধারে দুর্যোগ অধিদপ্তরের পরিচালক আনিছুর রহমানকে (ত্রাণ) সভাপতি করে সাত সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর কমিটি ওই দুই মৌজায় বেদখল হওয়া ৪৯৩ একর জমি চিহ্নিত করে এবং অবৈধ দখলদারদের জমির দখল দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৮৯৩.৫৪ একর জমির মধ্যে চৈত্রকোল ইউনিয়নের চৈত্রকোল মৌজায় ২২৯ এবং অনন্তপুর মৌজায় ২৬৪ একর জমি চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ দখলে থাকা এসব জমি চাষাবাদ করা হতো। কিছু জমিতে অবৈধ দখলদারেরা জলাশয় ও বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন।

চৈত্রকোল গ্রামের বাসিন্দা ইউনুছ আলী বলেন, ‘মোহাজের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে এখানে কেউ আর নেই। আমি দুই একর জমি দেড় যুগ আগে মোহাজের পরিবারের এক সদস্যের কাছ থেকে স্ট্যাম্প মূল্যে ক্রয় করেছি। এখন যেহেতু সরকার এই জমি চাচ্ছে, অবশ্যই ছেড়ে দেব।’

দুই মৌজায় চিহ্নিত ৪৯৩ একরের মধ্যে অধিকাংশ জমি পতিত বলে জানান পিআইও মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এসব জমিতে অবৈধ দখলদারেরা চাষাবাদ করতেন। কিছু জমিতে অবৈধ শতাধিক বসতবাড়ি আছে। কীভাবে এসব বাড়ি সরিয়ে জমি উদ্ধার করা যায়, সেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে জমিতে অবৈধ দখলদার কেউই থাকতে পারবেন না। পতিত জমি ইতিমধ্যে দখলে নেওয়া হয়েছে।