৫০ হেক্টরে ধান হয়নি, পথে বসেছেন চাষিরা

গাছ বড় হলেও কোনো শিষ বের হয়নি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।

রংপুরের পীরগাছার তালুকইসাদ নয়াটারি গ্রামে বোরো ধানের চারা রোপণ করলেও শিষ বের হয়নি। গত বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

চলতি বোরো মৌসুমে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে কোনো ধান হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, দেশের দুটি কোম্পানির বীজের চারা রোপণ করেন তাঁরা। গাছ ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত শিষ বের হয়নি। এতে শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ৮ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে হাসান আলী নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে মাঠ পরিদর্শন করে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, বোরো মৌসুমে পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাদ নয়াটারী ও নাগদহ গ্রামের শতাধিক কৃষক স্থানীয় দেউতি বাজারের মেসার্স শামীম সিড স্টোর থেকে পৃথক দুটি কোম্পানির হাইব্রিড জাতের প্যাকেট বোরো বীজ কিনে চারা করেন। এরপর সেই চারা তাঁরা অন্তত ৫০ হেক্টর জমিতে রোপণ করেন। গাছ বড় হলেও কোনো শিষ বের হয়নি।

এক একর জমি চুক্তি নিয়ে ধার করে ধান লাগিয়েছিলাম। কোনো ধান হয়নি। কীভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।
নাজমুল ইসলাম, কৃষক

দেউতি গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, তিনি ধারদেনা করে নয়াটারী গ্রামে এবারে শুধু বোরো চাষের জন্য একরপ্রতি ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে সাড়ে ১২ একর জমি বর্গা নিয়েছিলেন। ধানের ফলন না হওয়ায় তাঁর প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা গচ্চা গেছে। এ অবস্থায় তিনি পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পথে বসেছেন।

ওই বীজের চারা রোপণ করে দেউতি, নয়াটারী ও নাগদহ গ্রামের শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এক একর জমি চুক্তি নিয়ে ধারদেনা করে ধান লাগিয়েছিলাম। কোনো ধান হয়নি। এবারে কীভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বীজ বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, কেন এমনটা হলো তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে বীজ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর সপ্তাহখানেক আগে তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তাদের জানান। এরপর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।

তাঁরা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিলে বোঝা যাবে ধান না হওয়ার পেছনে সমস্যা কী ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কৃষি অধিদপ্তর থেকে প্রতিনিধিদল এসে সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শন করে গেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাকিবুল আলম বলেন, কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তাঁরা মাঠে গিয়ে কৃষক ও বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেবেন।