৫০০ বাতি অকেজো, বাড়ছে অপরাধ

২০টি স্থানে সরেজমিনে বিদ্যুতের খুঁটিতে আলো জ্বলতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে আছে।

মাদারীপুর জেলার মানচিত্র

মাদারীপুরের রাজৈর পৌর এলাকায় সৌরবিদ্যুতের ৫০০টির বেশি সড়কবাতি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। সন্ধ্যার পর শহরজুড়ে ঘুটঘুটে আঁধার নামে। অন্ধকারে রাস্তায় ভালোমতো দেখতে না পেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। চুরি-ছিনতাই রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়েছে। সন্ধ্যার পর লোকজন রাস্তায় চলাচল করে সড়কের পাশের দোকানের আলোয়।

রাজৈর থানা-পুলিশের তথ্য বলছে, গত তিন বছরে রাজৈর পৌর এলাকায় চুরি–ছিনতাই বেড়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১৪টি স্থানে চুরির ঘটনা ঘটে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১৭টিতে দাঁড়ায়। চুরির মামলা ছাড়াও গত তিন বছরে ডাকাতি মামলা হয়েছে ১৪টি। গত এক বছরে পৌর এলাকা থেকে ৩৪ মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অধিকাংশ চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয় না।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সড়কে পর্যাপ্ত আলো নেই, সাধারণত সেসব সড়কেই অপরাধীরা অবস্থান নেয়। সাধারণ মানুষকে চলাচলে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রাজৈর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাজৈর থানা রোড। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পুরো সড়ক অন্ধকারাচ্ছন্ন। থানার ঠিক সামনে একটি মুদি দোকান। ছোট্ট ওই দোকানটিতেও গত এক বছরে তিনবার চুরি হয়েছে বলে জানালেন দোকানি নূর ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার মাস হলো এখানে দোকান ভাড়া নিয়েছি। আমার আগে এখানে লিয়াকত নামের এক দোকানি এই দোকানটি চালাতেন। একের পর এক চুরির কারণে লিয়াকত দোকানটি ছেড়ে দিয়েছেন। চুরি হওয়ার পরে

রাতে ভয়ে ভয়ে থাকি। মাঝেমধ্যে দোকানের ভেতরেই ঘুমাই।’

থানার মোড়ের প্রায় এক কিলোমিটারের সড়কটি ছাড়াও হৃদয়নন্দী আদর্শগ্রাম, টেকেরহাট আবাসিক এলাকা, সানেরপাড়, থানার মোড়, মিল্কভিটা সড়ক, কুণ্ডুপাড়া, সাহাপাড়াসহ পৌর এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে আলো জ্বলছে না।

জানতে চাইলে রাজৈর পৌরসভার মেয়র নাজমা রশীদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন মেয়র। পৌরসভাটিও সি গ্রেডের। পৌর এলাকায় সড়কবাতি ঠিকমতো নেই, এ কারণে অপরাধ বাড়ছে এটা সত্যি। তবে নতুন করে কীভাবে পৌর এলাকাটি আলোকিত করা যায়, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়েছি।’

রাজৈর পৌরসভার সচিব মো. মাসুদ আলম বলছেন, পৌরসভাকে আলোকিত করতে পুরো এলাকায় সৌরবাতি লাগানো হয়েছিল। বাতিগুলো দুই বছর পর্যন্ত ভালো ছিল। নিয়ম অনুসারে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দুই বছর তদারকিও করেছে। এরপর এগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল রাজৈর পৌরসভার। তবে লোকবল কম থাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ সেভাবে বাতিগুলো দেখভাল করতে পারেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কগুলোর পাশেই সৌরবাতির খুঁটি উল্টে পড়ে আছে। খুঁটির সঙ্গে বাতি, সৌর প্যানেল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন। যে কয়টি খুঁটি সড়কের পাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোও মরিচা পড়া। কোনোটির বাতি ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল খুঁটির সঙ্গে ঝুলছে। পৌরসভার উল্লেখযোগ্য সড়কগুলোর আশপাশের দোকানের বাতি আর সাইনবোর্ডের আলোতে যতটুকু আলোকিত হয়, তা দিয়েই পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে।

রাজৈর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে সৌরবাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫১৭টি সৌরবাতি স্থাপন করে পল্লী-দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সৌরবাতি স্থাপনের ৫ থেকে ৬ মাস পর থেকেই বাতিগুলো নষ্ট হতে থাকে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়কের বাতি খুঁটিসহ ভেঙে পড়েছে। সন্ধ্যা হলে রাজৈর পৌর এলাকার সড়কগুলোতে অন্ধকার নেমে আসে। এ সুযোগে একশ্রেণির মানুষ চুরি, ছিনতাইসহ মাদক কেনাবেচায় ঝুঁকে পড়ছে।