৫০০ মিটার দূরে দাম দ্বিগুণ

আমদানি বেশি থাকলেও বিধিনিষেধের প্রভাবে ক্রেতা কম। অবিক্রীত থাকলে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। খুচরা বিক্রেতারা তাই দাম বেশি রাখছেন।

দিনাজপুরে বিভিন্ন সবজি পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু পণ্য বিক্রি হচ্ছে চার গুণ বেশি দামে। শহরের বাহাদুর বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনছেন পাইকারেরা। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে গোড় এ শহীদ ময়দানের খুচরাসহ বিভিন্ন বাজারে এসব সবজি বিক্রি হয়।

পাইকারি বাজারে দাম না পেয়ে কৃষকেরা গুনছেন লোকসান, সাধারণ মানুষ সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পণ্যের আমদানি বেশি, ক্রেতাও কম। এ ছাড়া পরিবহন বন্ধ থাকায় বাইরের পাইকারেরাও আসছেন না। সবজি দুই দিনের বেশি রাখাও যায় না। সবকিছু বিবেচনায় পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার সকালে শহরের বাহাদুর বাজার ঘুরে লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৪-৫ ও গোল বেগুন ১০-১২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া করলা প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা, পেঁপে, কচু, মিষ্টিকুমড়া, পটোল, লাউ, শসা ১০-১৫ টাকা, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দুল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৮-১০ টাকা, বরবটি ২০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

অন্যদিকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে গোড় এ শহীদ ময়দানে খুচরা বাজারে লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা, গোল বেগুন ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয় গতকাল। এ ছাড়া করলা প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, কচু ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৩৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৩০ টাকা, বরবটি ৪০-৪৫ টাকা, পটোল ২৫ টাকা, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙে ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা কলা ২০ ও শসা ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

এমনিতেই আয়রোজগার নেই। এর ওপর নিত্যপণ্যের দামও বেশি। এই মৌসুমে সবজির দাম কম থাকার কথা, সেখানে তার উল্টো।
রোজিনা বেগম, সবজির ক্রেতা

গতকাল গোড় এ শহীদ ময়দানের বাজার থেকে সবজি কেনেন রোজিনা বেগম (৩৫)। তিনি বলেন, বেগুন কিনছেন ১৬ টাকা কেজি দরে। এমনিতেই আয়রোজগার নেই। এর ওপর নিত্যপণ্যের দামও বেশি। এই মৌসুমে সবজির দাম কম থাকার কথা, সেখানে তার উল্টো।

পাইকারি বাজারে আলাপ হয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে। তাঁরা বলেন, করোনার আগে এমনও সময় গেছে খেতের পাশ থেকেই ট্রাকে সবজি তুলে দিয়েছেন। পাইকারের কাছে টাকা বুঝে নিয়েছেন। এখন বাইরের পাইকারেরা আসেন না। সবজি বিক্রি করেও খরচ ওঠাতে পারছেন না তাঁরা।

সদর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গা এলাকা থেকে বেগুন আর করলা নিয়ে পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে এসেছিলেন আবদুস সালাম। ১৫ শতক মাটিতে লম্বা বেগুন চাষ করেছেন তিনি। সালাম বলেন, দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর দুজন দাম হাঁকেন ৪ টাকা কেজি। জমি চাষ দেওয়া, চারা, সার, কীটনাশক বাবদ প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ। এই দামে বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

পাইকারি আর খুচরা বাজারের দামের এমন পার্থক্য নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচামাল দুই দিনের বেশি রাখলে নষ্ট হয়। লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতা কম। আল আমিন নামে এক বিক্রেতা বলেন, সবজির দাম খুব একটা বাড়েনি। পাইকারি বাজারের দামের সঙ্গে খুচরা বাজারের হিসাব মেলালে হবে না। পরিবহন খরচ, হাট খাজনা, কর্মচারীর বেতন সবকিছু হিসাব করলে তাঁদেরও খুব বেশি লাভ থাকে না।

কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে দাম বেশি না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দ্রুত প্রতিটি দোকানে প্রতিদিনকার মূল্যতালিকা টানানোর ব্যবস্থা করা হবে।