৫৫২ কিমি সড়ক, আটটি সেতু ও কালভার্টের ক্ষতি

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায়।

সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের এই স্থানে থাকা পাকা সেতুটি বন্যায় ভেঙে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের পাকা সেতুর ওপর এলাকার লোকজন বসে গল্প করছিলেন। এর মধ্যেই পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে প্রথমে সংযোগ সড়কে ফাটল দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেতুর ওপরে থাকা লোকজনকে সরে যেতে চিৎকার দেন এক ব্যক্তি। লোকজন কোনো রকমে দৌড়ে সেতুর ওপর থেকে নামেন। পর মুহূর্তেই পুরো সেতুটি ধসে বিলীন হয়ে যায় ঢলের পানিতে।

সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের সেতুটি ছিল দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের পাশে। এটি ২০০৯ সালে নির্মাণ করা হয়। বন্যার পানিতে সেতু ভেঙে ও সড়কের ক্ষতি হওয়ায় এখনো এই সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ছাতকের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ।

শুধু এই একটি সেতু নয়, এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জে আটটি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ৫৫২ কিলোমিটার সড়কের। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৫০০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৫২ কিলোমিটার। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় শক্তিয়ারখলা এলাকায় থাকা একটি রাবার বাঁধ ও কিছু বেড়িবাঁধেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের। একই সঙ্গে সেতু ও কালভার্টের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় থাকা বেড়িবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে গেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায়। গ্রামীণ সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।

ছাতকের নোয়ারাবাই-বাংলাবাজার সড়ক, ছাতক-জাউয়াবাজার সড়ক, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, কৈতক-হায়দরপুর সড়ক, লামা-রসুলগঞ্জ সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে।

তাহিরপুরের তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, সীমান্তবর্তী লাউড়ের গড়-কলাগাঁও সড়ক; বিশ্বম্ভরপুরের নিয়ামতপুর-ফতেপুর-আনোয়ারপুর সড়ক, সলুকাবাদ ইউনিয়নের ভাটেরটেক এলাকায় দুটি স্থানে পাহাড়ি ঢলে সড়ক ভেঙে গেছে। দোয়ারাবাজারের দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার সড়ক, দোয়ারাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার-বোগলা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, জেলায় এলজিইিডির প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতি ১৫০ কোটি টাকার। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বন্যায় তাঁদের ৫২ কিলোমিটার সড়ক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে ১৪ মে থেকে বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দেয়।