জমি অধিগ্রহণ ও সীমানা নির্ধারণেই গেল ৫৯ বছর

সিলেট বিমানবন্দর–লাগোয়া বাইশটিলা এলাকায় অধিগ্রহণ হওয়া ‘সিলেট ন্যাচারাল পার্ক’–এর কোনো অগ্রগতি হয়নি দীর্ঘ ৫৯ বছরেও। সম্প্রতি তোলা
ছবি: আনিস মাহমুদ

এলাকার নাম বাইশটিলা। নাম শুনেই বোঝা যায় টিলাবেষ্টিত এলাকা। অথবা ২২টি টিলার সমাহার। তবে দৃশ্যমান রয়েছে মাত্র চারটি টিলা। সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কেই এর অবস্থান। পাশেই সিলেট বিমানবন্দর। বাইশটিলা এলাকাটি সিলেট জেলা পরিষদের ন্যাচারাল পার্কের জন্য প্রায় ৫৯ বছর আগে নির্ধারণ করা।

পার্কের লাগোয়া বিমানবন্দরের রানওয়ে, যেটি দেয়ালঘেরা। পার্কটির কিছু অংশে কেবল পিলার বসিয়ে জায়গা নির্ধারণ করে রাখা। দীর্ঘদিনেও এটি আলোর মুখ দেখেনি।
তবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি—যেহেতু এটি ‘ন্যাচারাল পার্ক’, সে জন্য ইট-পাথরের কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেই পার্কটি পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর পূর্বে আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং বিশেষ সুবিধাসংবলিত উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই প্রস্তাবনার অগ্রগতি হয়নি।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বড়শালা এলাকাধীন জেলা পরিষদের ন্যাচারাল পার্কের জন্য ১৯৬২-৬৩ সালে ৬৩ দশমিক ৯২ একর ভূমি পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরের জন্য ১৯ দশমিক ৬৫ একর এবং রাস্তার জন্য ৩ একর জায়গা স্থানান্তর হয়। বর্তমানে পার্কটির ৪২ দশমিক ৪৭ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে জেলা পরিষদের অধিগ্রহণ করা জায়গার স্বত্ব নিয়ে মামলাও হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৩ সালের দিকে বাদীপক্ষের আপিল খারিজ হয়ে যায়।

অন্যদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জেলা পরিষদের কাছ থেকে নেওয়া জায়গা নিলেও সেটির অধিগ্রহণ মূল্য পরিশোধ করেনি। সেটি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পার্কটি ২০০২ সালের দিকে দরপত্র আহ্বান করে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইজারাগ্রহীতার নামে পার্কের গাছপালা কর্তন, টিলার মাটি কেটে ফেলাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। এতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে বাধ্য হয়েই ইজারা বাতিল করে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পরিষদের ন্যাচারাল পার্ক পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ন্যাচারাল পার্ক এলাকাটিতে একাধিক সাইনবোর্ড দেওয়া। এতে জেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গা এবং ন্যাচারাল পার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান উল্লেখ করা। টিলা এলাকার পাশে ছোট লেক আকারে জলাশয়। পাশে ধানখেত। জেলা পরিষদের পার্কের টিলায় কয়েকজন দর্শনার্থী এবং পর্যটকদের আনাগোনা দেখা গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কটিতে পার্কের জায়গায় গরু চড়াতে দেখা গেছে।

বাইশটিলা গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই আছে পার্কটি। আগে এখানে পার্ক হিসেবে বিভিন্ন স্থাপনা হওয়ার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো তেমন কিছু হয়নি। এলাকাটি বাইশটিলা গ্রাম হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। আগে লোকসমাগম তেমন না হলেও এখন এ এলাকায় দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা এলাকাটিতে গরু-ছাগলের ঘাস সংগ্রহ ও ঘাস কেটে নিয়ে যান।

রফিক মিয়া আরও বলেন, ২২টি টিলা ছিল বলে এলাকাটি বাইশটিলা গ্রাম হলেও এখন আর টিলাগুলো নেই। অনেক টিলাই কেটে ফেলা হয়েছে। এখন মাত্র কয়েকটি টিলা দৃশ্যমান অবস্থায় রয়েছে।

জেলা পরিষদের পার্কে ঘুরতে যাওয়া নগরের লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা উৎপল রায় বলেন, এখানে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা নেই। দোকানপাট বা খাওয়ার মতো কোনো কিছুই নেই। এ জন্য বিমানবন্দর এলাকা বা পার্ক এলাকা পেরিয়ে গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।

সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ বলেন, ন্যাচারাল পার্ক হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এ জন্য আগে পার্ক নিয়ে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তবে মাঝখানে পার্কের সীমানা নির্ধারণে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে পিলার দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এটি পার্ক হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাঝখানে ইজারার মাধ্যমে পার্ক পরিচালনা করানো হলেও লিজগ্রহীতা পার্কের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করেছেন। এ জন্য লিজ বাতিল করা হয়েছিল।

দেবজিৎ সিংহ আরও বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে পার্কের টিলাসহ আশপাশে কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে পর্যটকদের জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি স্বল্প পরিসরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা। টিলায় ছোট খোপ আকারে রিসোর্ট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটির তেমন অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করি, মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির অনুমোদন আসবে।’