৬ বছর কনডেমড সেলে, অবশেষে কারামুক্ত রিকশাচালক আক্কাস

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার
ফাইল ছবি

প্রায় ছয় বছর কারাভোগ শেষে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আক্কাস আলী (৩৮) উচ্চ আদালতের নির্দেশে কারামুক্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের কনডেমড সেল থেকে কারামুক্ত হন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আক্কাস আলীর স্ত্রীর আপিলে উচ্চ আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের খালাসের আদেশ পাওয়ার পর আজ সন্ধ্যায় তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

আক্কাস আলী নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ঝাউপাড়া এলাকার রহমত আলীর ছেলে। কারামুক্ত হয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিনা অপরাধে তাঁর ফাঁসি হয়েছিল। ফাঁসির রায়ের পর থেকে কনডেমড সেলে অন্ধকার ঘরে ছয়টি বছর কেটেছে। তিনি বলেন, ‘গ্রামের লোকজনের সহযোগিতার চাল তুলে আমার দরিদ্র সংসার চলেছে। কীভাবে যে একেকটি দিন কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।’ এ কথা বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিনা অপরাধে আমার ফাঁসি হয়েছিল। ফাঁসির রায়ের পর থেকে কনডেমড সেলে অন্ধকার ঘরে ছয়টি বছর কেটেছে। গ্রামের লোকজনের সহযোগিতার চাল তুলে আমার দরিদ্র সংসার চলেছে। কীভাবে যে একেকটি দিন কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।
আক্কাস আলী, কারামুক্ত রিকশাচালক

আক্কাস আলী বলেন, তিনি আড়াইহাজারে রিকশা চালাতেন। উপজেলার বালিয়াপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম তাঁর রিকশায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন। ভাড়া নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হয়। ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীর তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন এবং জাহাঙ্গীর হুমকি দিয়ে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরবর্তী সময়ে ডাকাতিকালে এক হত্যার ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার মামলায় জাহাঙ্গীর পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। ঝগড়ার জেরে জাহাঙ্গীর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর (আক্কাস আলী) নাম জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আক্কাস বলেন, জাহাঙ্গীরের জবানবন্দিতে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানা কিছুই ছিল না। এই ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে অনেক মারধর ও নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি মারধর ও নির্যাতনের পরও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে পুলিশকে জানান। তিনি কোনো স্বীকারোক্তি দেননি। তিনি বলেন, ‘মামলার পর থেকে ওই মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছি। সবাইকে বলেছি আমি জড়িত না, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে ওই মামলায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আমিসহ ৬ জনকে ফাঁসি দেন।’

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আক্কাস আলীর স্ত্রীর আপিলে উচ্চ আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের খালাসের আদেশ পাওয়ার পর আজ সন্ধ্যায় তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
শাহ রফিকুল ইসলাম, জেলার, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্কাস বলেন, বিনা অপরাধে তিনি ছয় বছর ফাঁসির কনডেমড সেলে জেল খাটেন। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম গ্রামের লোকজনের সহায়তায় উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাঁকে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস দেন। তিনি বলেন, জেলা কারাগারের জেলারও তাঁকে অনেক সহযোগিতা করেন। কারামুক্ত আক্কাস সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) জাসমিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় ছয়জনের ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তী সময়ে আপিলে তিন আসামির ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন উচ্চ আদালত এবং অপর তিন আসামি আক্কাস, অহিদ ও আক্তার হোসেনের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বাতিল করে খালাস প্রদান করেন।