৬ মাস সড়কে জমে থাকে পানি, বাকি সময় বড় বড় গর্ত

ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর পৌরসভার প্রবেশ পথটির ৫০০ মিটারে বড় বড় গর্ত হয়ে জমে থাকে পানি। সম্প্রতি তোলা।প্রথম আলো

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার পূর্বাঞ্চলবাসীর পৌর শহরে প্রবেশের একটিই পথ। সেটি কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ড থেকে চৌগাছার সংযোগ সড়ক। আধা কিলোমিটার সড়কটি আমবাজার এলাকার ওপর দিয়ে গেছে বলে একে আমবাজার সড়ক নামেই চেনে লোকজন। এই সড়কই এখন ভোগান্তির কারণ পৌরসভার চারটি গ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের বিশালসংখ্যক মানুষের। সড়কটি এতটাই ভাঙাচোরা যে বছরের ছয় মাসই এখানে জমে থাকে পানি। আর বাকি সময় বেরিয়ে থাকে বড় বড় গর্ত।

একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান পানি আর কাদা মাড়িয়ে মূল শহরে প্রবেশ করতে হয় পূর্বাঞ্চলবাসীকে। এই ভোগান্তি চলছে বছরের পর বছর। এরপরও কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে কখনো কখনো আমবাজার সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ গা না করায় শহরে প্রবেশ করতে দেড় কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয় সাধারণ মানুষকে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের। যে কারণে তারা উন্নয়নকাজ করতে পারছে না। আর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বলছে, এটি সংযোগ সড়ক হওয়ায় মেরামতকাজের পুরো বরাদ্দ মিলতে তাদের কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত হয়ে যাবে বলে আশা করছে তারা।

ঝিনাইদহের ৬টি পৌরসভার মধ্যে কোটচাঁদপুর পৌরসভাটি ১৫০ বছরের পুরোনো। ১৮৮৩ সালে এই পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত। ১৮টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ঐতিহ্যবাহী এই পৌরসভার আয়তন ১৭ দশমিক ৪৬ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভা এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার লোকের বাস। পৌরসভাটির মাঝ দিয়ে চলে গেছে কালীগঞ্জ-চুয়াডাঙ্গা ভায়া জীবননগর আঞ্চলিক মহাসড়ক। একসময় বড় বড় সব যানবাহন আমবাজার সংযোগ সড়কটি দিয়ে চলাচল করত। তখনো এর আঞ্চলিক মহাসড়ক নামকরণ হয়নি। তবে পরবর্তী সময়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে আঞ্চলিক মহাসড়ক নামকরণ করে। তখন থেকেই সংযোগ সড়কটি দিয়ে আর বড় বড় যানবাহন চলাচল করে না। তাই বলে এখনো গুরুত্ব কমেনি এই সড়কের।

ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর পৌরসভার প্রবেশ পথটির ৫০০ মিটারে বড় বড় গর্ত হয়ে জমে থাকে পানি। এতে বড় যান তো বটেই, ছোট–মাঝারি যানও কাত হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি তোলা।
প্রথম আলো

পৌর এলাকার সলেমানপুর গ্রামের আবদুর রশিদ জানান, পৌরসভা এলাকার পূর্বাঞ্চলবাসীকে মূল শহরে প্রবেশ করতে আমবাজার এলাকার সংযোগ সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। পশ্চিমাঞ্চলবাসী ব্যবহার করে দুধস্বর সড়কটি। উত্তরের বাসিন্দারা ফুলবাড়ী সড়ক আর দক্ষিণের বাসিন্দারা ব্যবহার করে সলেমানপুর সড়ক। বাকি তিন দিকের মানুষেরই শহরে ঢোকার আরও কয়েকটি ছোট ছোট সংযোগ সড়ক থাকলেও পৌরসভার চারটি গ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের মানুষদের মূল শহরে প্রবেশের এই একটিমাত্র সড়ক।

এ ছাড়া আমবাজারের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া এই সড়কের ভাঙাচোরা ৫০০ মিটার শেষেই পৌরসভার মূল অফিস। সড়কে আরও আছে কোটচাঁদপুর মডেল থানা, উপজেলা ভূমি অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। এত এত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থাকার পরও এই ৫০০ মিটার সড়ক এখন চলাচলের একেবারেই অযোগ্য। স্থানীয়রা বলছেন, বছরের ছয় মাসই এখানে জমে থাকে পানি। বাকি সময় পানি শুকিয়ে গেলেও বড় বড় গর্ত থেকে যায়। তাঁরা একাধিকবার এ বিষয়ে পৌরসভায় অভিযোগ জানালেও কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মিজানুর রহমান জানান, সড়কটি এলজিইডির হওয়ায় পৌরসভার পক্ষ থেকে উন্নয়নকাজ করা হয়নি। তবে তিনি যতটুকু শুনেছেন, এলজিইডি ইতিমধ্যে সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা করছেন।

এলজিইডির কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, সড়কটি সংযোগ সড়ক। কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ড থেকে চৌগাছা সড়ককে সংযোগকারী এই সড়ক চওড়া করে সংস্কারের জন্য তাঁরা প্রাক্কলন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংযোগ সড়ক যুক্তিতে এর প্রস্থ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন। তবে পূর্বাঞ্চলবাসীর শহরে প্রবেশের এটি একমাত্র পথ—এই গুরুত্ব বিবেচনায় তাঁরা পুনরায় প্রস্থ বাড়িয়ে প্রাক্কলনের জন্য আবেদন করেছেন। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।