৬ মাসেও সংস্কার হয়নি আশাশুনির শ্রীউলা বাঁধ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি।

আম্পানে সব হারিয়ে ছয় মাস ধরে বাঁধের ওপর বসবাস করছেন শামছুন নাহারের মতো ৬৪টি পরিবার। গতকাল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালিতে।
ছবি: প্রথম আলো

‘২০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের ছেল আমার। তা দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী মিলিয়ে সাতজনের সংসার ভালোভাবে চলত। আরও কিছু জমাতি পারতাম। এখন কিছু নেই। বাড়িঘর, মাছের ঘের সব নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়ির ওপর পলিথিন দিয়ে খুপরি বানিয়ে বসবাস করছি সেই আম্পানের পরের দিন থেকে। ছয় মাস পার হয়ে গেল, এখনো অবস্থার কোনো উন্নতি দেখতিছিনে। বাঁধ বাঁধার কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী গ্রামের রহিম সানা। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর হাজরাখালী স্থানে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। ধসে পড়ে কাঁচা ও পাকা ঘরবাড়ি। মাছের ঘের, চিংড়িঘের ও ফসলি জমির পাশাপাশি রাস্তাঘাট তলিয়ে সব একাকার হয়ে যায়। বাসিন্দারা যে যার মতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। অনেকে চলে যায় আত্মীয়স্বজনের বাড়ি কিংবা অন্য কোনো শহরে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি।

সম্প্রতি দেখা যায়, শ্রীউলার হাজরাখালী এলাকাটি অনেকটা জনমানবশূন্য। কাঁচা ঘরবাড়ি অধিকাংশ মিশে গেছে নদীর পানিতে। আর পাকা ঘরবাড়ি পড়ে আছে কাত হয়ে। এলাকাজুড়ে জোয়ার-ভাটা খেলছে। যাঁরা এলাকার বইরে যেতে পারেননি, তাঁরা পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর খুপরি তৈরি করে বসবাস করছেন। তাঁদের করুণ অবস্থা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

হাজরাখালী গ্রামের শামছুন নাহার বলেন, ‘দুই পাশেই পানি, মাঝখানে জেগে আছে পাউবোর বেড়িবাঁধ। এ বাঁধের ওপর বসবাস করছি ৬৪টি পরিবার। আমাদের গ্রামে প্রায় সাড়ে ৩০০ পরিবারের বসবাস ছিল। ছয় মাস ধরে রইছি এ বাঁধের ওপর। আর কখনো বাড়ি ফিরতি পারব না। ১৫ কাঠার ভিটেবাড়ি সব নদীতে চলে গেছে। শিশু ছেলেমেয়েরা খেলা করবে, সে উপায় নেই। কোনো শৌচাগার নেই। খাবার পানি আনতি যাতি হয় তিন মাইল দূর মাড়িয়ালায়। তা-ও আবার নদীতে জোয়ারের জন্যি অপেক্ষা করতি হয়। কাজ নেই এলাকায়, তাই বাড়ির বেটা মানুষ সব দূর গ্রামে গেছে কাজের সন্ধানে। ঘরে খাবার নেই। কাল কী খাওয়াব ছেলেমেয়েদের, তার ঠিক থাকে না।’

শ্রীউলা ইউপির চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল বলেন, আশাশুনি উপজেলার ২২টি গ্রাম নিয়ে শ্রীউলা ইউনিয়ন। প্রায় আট হাজার পরিবারে এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। আম্পানের আঘাতে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এখন ঘরছাড়া। বাঁধ ভেঙে পড়ে আছে ছয় মাস হয়ে গেলেও সংস্কার না হওয়ায় এখনো পানিবন্দী ঘরবাড়িগুলো।

সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-২-এর আশাশুনির শ্রীউলা এলাকার দায়িত্বে থাকা শাখা কর্মকর্তা রাব্বি হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খোলপেটুয়া নদীর হাজারাখালী এলাকায় ৮০ মিটার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকবার স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করে সফল হওয়া যায়নি। বর্তমানে ওই বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে যাওয়া বাঁধ এখনো সংস্কার হয়নি। গতকাল আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালিতে।
ছবি : প্রথম আলো

আগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ আটকানোর জন্য ৩৩৫ মিটার রিং বাঁধ দেওয়া হবে। পরে মূল ভাঙনকবলিত এলাকার ৮০ মিটার সংস্কার করা হবে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রমিকদের থাকার জায়গা ঠিক করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বাঁধ মেরামত করা গেলে আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হবে যাবে। বাসযোগ্য হবে এসব এলাকা।