৭ বছরে ৯ বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল, তবু খুনের কিনারা হয়নি

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অঞ্জলী দেবীর খুনি কারা? এ রহস্যের কিনারা হয়নি সাত বছরেও। এ পর্যন্ত পুলিশের ৯ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। কিন্তু রহস্য দুর্ভেদ্যই থেকে গেল। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পর মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বাসার পাশে নগরের চকবাজারের উর্দু গলিতে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন অঞ্জলী দেবী। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী চিকিৎসক রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী বাদী হয়ে ওই দিন রাতে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এত দিনেও খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়ায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছে অঞ্জলীর পরিবার।
ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আবু সাঈদ মো. রেজা নামে পটিয়ার এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা জঙ্গি এরশাদ হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মোসাবিরুল ইসলামকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সর্বশেষ সন্ত্রাসী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু কারও কাছ থেকে অঞ্জলী হত্যার ক্লু (সূত্র) পাওয়া যায়নি।

২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট এহতেশামকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর গত সাড়ে তিন বছরেও নতুন কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলাটি ডিবি পুলিশ থেকে পিবিআইয়ে আসে তদন্তের জন্য। এর আগে ডিবি পুলিশের সাতজন পরিদর্শক মামলাটি তদন্ত করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মণ ছিলেন ডিবির সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা। তিনিও কিছু জানাতে পারেননি। পিবিআইয়ে আসার পর তদন্ত করেন আরও দুজন কর্মকর্তা। এখন তদন্ত করছেন পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুল। মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইল তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে কথা হয় মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি।’ তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। যেকোনো সময় ক্লু (সূত্র) পাওয়া যেতে পারে। আবার অনেক সময় একটু বেশি সময় লাগে। আমরা আশা ছাড়িনি।’

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে চার যুবক অংশ নেন। তাঁদের প্রত্যেকের কাঁধে স্কুলব্যাগ ছিল। ওই ব্যাগে করে তাঁরা রামদা নিয়ে আসেন। অঞ্জলী দেবীকে কুপিয়ে রামদা ব্যাগের ভেতর নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। হত্যাকারীরা ছিনতাইকারী হলে অঞ্জলীর মুঠোফোন ও টাকা কেড়ে নিতেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কিছুই নেননি তাঁরা।

পরিবারের সদস্যরাও কারও সঙ্গে বিরোধ বা কারণ জানাতে পারেননি। এমনকি কাউকে সন্দেহও করেননি তাঁরা।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আদালতে এ মামলার শুধু তারিখ পড়ছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদনের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

স্ত্রীকে হারিয়ে ঘটনার পর শহরের বাসা ছেড়ে দিয়ে দুই চিকিৎসক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী চলে যান রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী। সেখানে কিছুদিন থাকার পর এখন মেয়ের সঙ্গে মেহেরপুরে বাস করছেন এই চিকিৎসক। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর রোগী দেখে দিন পার করছেন তিনি। রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘অন্তত স্ত্রীর খুনের কারণটা জেনে যাতে মরতে পারি। সাত বছরেও খুনের রহস্যের কিছুই হলো না, কীভাবে বিচারে আশা রাখি।’