৭০ শতাংশ এলাকায় নাগরিক সুবিধা নেই

রংপুর
রংপুর

নগরবাসীর স্বপ্ন ছিল, রংপুর সিটি করপোরেশন হলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কিন্তু সাত বছর অতিবাহিত হলেও উন্নয়নের দৃশ্যমান ছোঁয়া নেই। মূল শহর ও আশপাশে কিছু রাস্তা হলেও গোটা নগরে তেমন উন্নয়ন হয়নি।

প্রায় ১০ লাখ জনসংখ্যার এই নগরে বাড়েনি সেবার মান। প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকায় এখনো নেই কোনো নাগরিক সুবিধা।

২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, সিটির বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ আধুনিক নগর গড়ে তোলার কিছুই হয়নি এখনো।

এসব বিষয়ে রংপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি মলয় কিশোর ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক আশা করেছিলাম, সিটি করপোরেশন হলে রংপুর নগর হয়ে উঠবে পরিবেশবান্ধব নগর। কিন্তু সেই আশা নগরবাসীর স্বপ্নের মধ্যেই থেকে গেল।’

নগরের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বর্ধিত এলাকায় আগে এক শতাংশ জমির ভূমি কর ছিল ৭ টাকা। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর তা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। একতলা পাকা ভবনের কর ছিল প্রতি বর্গফুট ৫ টাকা হারে। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। আধা পাকা বাড়ি থেকে আটতলা পাকা বাড়ির ক্ষেত্রে এখন যে কর দিতে হয়, সেটা আগের প্রায় দ্বিগুণ। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৮৬টি ব্যবসার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণ করা হয়েছে। পৌরসভায় যা ছিল অর্ধেক।

 সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সাবেক পৌরসভার আয়তন ছিল ৫২ বর্গকিলোমিটার। তখন ওয়ার্ড ছিল ১৫টি। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এর আয়তন বেড়ে হয়েছে ২০৩ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড হয়েছে ৩৩টি। সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নসহ কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার একটি করে ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড আদতে এখনো গ্রামেই থেকে গেল।

রংপুর বিভাগ হওয়ার ৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সিটি করপোরেশন হওয়ারও বয়স সাত বছর হলো। কিন্তু এখনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা উন্নয়ন প্রকল্প হলো না। অপরিকল্পিতভাবে হোটেল, আবাসিক হোটেল, আবাসিক ভবন বা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে শহরের সৌন্দর্য বাড়ছে না।

সিটি করপোরেশন সূত্র আরও জানায়, বেসরকারি পর্যায়ে নির্মিত ভবনের নকশা অনুমোদনসহ অন্য ছাড়পত্র প্রদান করা হচ্ছে। অথচ বহুতলবিশিষ্ট ইমারত বা নগরের সৌন্দর্য রক্ষা করে এমন ধারণা বা কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল নেই। তাই জাতীয় স্বার্থে এলাকার ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে যুক্তিসংগতভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী মহানগরের মতো গঠিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুরূপভাবে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর হিসেবে উন্নয়ন ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বার্থে রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা অপরিহার্য।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নগর উন্নয়নের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

তবে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সরকারি বরাদ্দ কম থাকলেও নগরের বিধ্বস্ত সব রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন তিনি সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় থেকে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া দাতা সংস্থাদের দেওয়া অর্থ বরাদ্দ থেকে নগরের বর্ধিত এলাকাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মেয়র বলেন, রংপুর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না। ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। তাই রংপুর উন্নয়ন প্রকল্প যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে, ততই নগরের জন্য ভালো হবে।

শহরের বেতপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, শহরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র এলাকায় সড়কের দুই পাশ অটোরিকশার দখলে থাকায় পথ চলতে খুবই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এলেও বেশি দিন থাকেন না। অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এ কারণে অভিযানে ভাটা পড়ে যায়।’

নগরের বর্ধিত এলাকাগুলোর নাগরিক সুবিধা তেমন বাড়েনি। এসব স্থানের নাগরিকের জন্য পানির সুব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশনের জন্য নালা গড়ে তোলা এবং রাস্তাঘাটগুলো পাকা হয়নি আজও। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেনুঘাট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান বলেন, ‘নামেই সিটি করপোরেশন। প্রধান রাস্তাটি পাকা হলেও অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। পানি ও যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গুলালগুদাই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পৌরসভার আমলে আমরা ভালো ছিলাম। এখন আমরা আগের চেয়ে কর বেশি দিই, কিন্তু সিটি করপোরেশনের তেমন সুবিধা পাই না।’

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, কাঁচা রাস্তাগুলো পর্যায়ক্রমে পাকা হচ্ছে। পানির সমস্যা দূর করতে অনেক স্থানে পানির পাইপলাইনের কাজ হয়েছে। সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। আর সিটির নিয়ম অনুযায়ী কর বাড়ানো হয়েছে।