৭০ হাজার চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

ঢাকাসহ বিভিন্ন আড়তদার ও ট্যানারির মালিকের কাছে জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

সরকার নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪০-৪৫ টাকা দরে কিনেছেন দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছেন। ২০-২৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করবেন। কিন্তু বিক্রির সময় এখন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম দিতে চাচ্ছেন ২৫-৩০ টাকা। ফলে ৭০ হাজারের বেশি চামড়া নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।

চামড়ার ন্যায্যমূল্য ও ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায়ের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার জেলার চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, চলতি মৌসুমে সরকারি হস্তক্ষেপ দেখে আশ্বাস পেয়ে চামড়া কিনেছেন তাঁরা। কিন্তু এখন আড়তদার ও ট্যানারির মালিকেরা যখন ন্যায্যমূল্য দিচ্ছেন না, তখন আবার সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তাঁরা।

লিখিত বক্তব্যে চামড়া ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন আড়তদার ও ট্যানারির মালিকের কাছে জেলার ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বকেয়া আদায় নেই, তার ওপর ধারদেনা করে এবারও চামড়া কিনেছেন। দাম না থাকায় এবার পথে বসার উপক্রম অনেকের।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের তথ্যমতে, ২০১০ সালের দিকে জেলায় চামড়ার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এক হাজারের বেশি
ব্যবসায়ী। পাশাপাশি মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও ছিলেন। ক্রমে কমতে কমতে এখন ব্যবসা ধরে রেখেছেন ৩০-৩৫ জন। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে হয়েছেন শ্রমিক।

গত শনিবার দুপুরে শহরের রামনগর এলাকায় চামড়ার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। মার্কেটে চামড়া নেই, নেই হাঁকডাক। চেয়ারে বসে আছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। আলাপচারিতায় জানালেন, মৌসুম ছাড়াও ভরদুপুরে কথা বলার সময় থাকত না তাঁদের। বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া আসত, চলত দর–কষাকষি। এখন ব্যবসাই নেই। যে কয়েকজন আছেন, নিজ নিজ আড়তে বসে চামড়া কিনছেন।

এরপর কয়েকটি গুদাম ঘুরে দেখা গেল, চামড়ায় পুনরায় লবণ দেওয়ার কাজ চলছে। চামড়া ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বললেন, প্রায় এক মাস হয়ে গেছে আড়াই হাজার চামড়ায় লবণ দিয়ে রেখেছেন। দাম না থাকায় নতুন করে লবণ দিয়ে রাখতে হচ্ছে। বাজারে এখন প্রতিটি চামড়ার দাম ৩০০-৫০০ টাকা। যেভাবে খরচ হয়েছে, এই দামে বিক্রি করলে পুঁজিই থাকে না। গত বছর প্রতিটি চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন তিনি।

চামড়া ব্যবসায়ী শুকুর আলী গত চার বছর এ ব্যবসায় অনিয়মিত ছিলেন। সরকারি ঘোষণার পর এবার বিভিন্নজনের কাছে ধারদেনা করে ব্যবসায় টাকা লাগিয়েছেন। দেড় হাজার ছাগলের চামড়া মজুত আছে তাঁর। এক সপ্তাহের মধ্যে এই চামড়া বিক্রি করতে না পারলে মাটিতে পুঁতে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারির মালিক ও আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে প্রায় ৫ বছর ধরে ব্যবসায় লোকসান গুনছেন তাঁরা।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বললেন, ‘টাকা পড়ে আছে আড়তদারদের কাছে। না পারছি ব্যবসাটা ধরে রাখতে, না পারছি ছাড়তে। মামলা করে টাকা আদায় করব, এমন অবস্থাও নেই। কারণ, আমরা যখন মালামাল দিই, আমাদের কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয় না। আড়তদার শুধু একটা স্লিপ ধরিয়ে দেন, তা–ও সেখানে লাল কালি দিয়ে লেখা থাকে “বাতিল”।’

দিনাজপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ব্যবসায় মন্দা চলছে। এই সময়ের মধ্যে ট্যানারির মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুবার বৈঠক হয়। বৈঠকে ট্যানারির মালিকেরা আমাদের বকেয়া পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। তাঁরা সরকারি ঋণ পেলেন, প্রণোদনা পেলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করলেন না।’