৯০ টাকার দুই বেলার খাবার এখন ১৫০

প্রথম আলো ফাইল ছবি

একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মহারাজ মিয়াকে (৪৫) প্রতিদিন সকাল-দুপুর দুই বেলা রেস্তোরাঁর খাবার খেতে হয়। এ জন্য আগে তাঁর প্রতিদিন খরচ হতো সকালে ৩০ টাকা ও দুপুরে ৬০, মোট ৯০ টাকা। কিন্তু নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন মহারাজের প্রতিদিন দুই বেলায় খরচ হচ্ছে ১৫০ টাকা।

সারা দেশের মতো ঝালকাঠিতে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবারে। তাই বিপাকে পড়েছেন মহারাজ মিয়াদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ।

আগে যেখানে দেড় প্লেট ভাত, আলুভর্তা, ডালভাজি পাওয়া যেত ৩০ টাকায়, সেখানে এখন লাগছে ৫০ টাকা। আগে চাষের মাছ প্রতি পিস ছিল ৪০ টাকা। সঙ্গে ১০ টাকার ভাত ও ১০ টাকা সবজি হলেই চলত। আর এখন দুপুরে মাছ, সবজি ও ভাত খেতে হলে লাগছে ১০০ টাকার বেশি। বর্তমানে চাষের রুই বা কাতল প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ভাত ২০ টাকা এবং সবজি প্রতি প্লেট ২০ টাকা করে রাখা হচ্ছে।

আবার অনেক হোটেলমালিক দাম না বাড়িয়ে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে ঠিকমতো পেট ভরছে না ভোক্তাদের। ভোজ্যতেল ও ময়দার দাম বেড়ে যাওয়ায় রেস্তোরাঁয় ৫ টাকার পরোটা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিঙাড়া, সমুচার মতো খাবারের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে দেড় গুণ। সংসার খরচে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি এভাবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

জেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ভোজ্যতেল, চাল, ময়দা, মাছ-সবজির কিংবা পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে বেড়ে গেছে হোটেল–রেস্তোরাঁর সব রকম খাবারের দাম। বদলে গেছে মূল্যতালিকা। ভাতের প্লেট ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ টাকা। মাছ ও সবজির দাম প্লেটপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। একটি ডিম ভুনার দাম রাখা হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

অনেক দোকানি মূল্য না বাড়িয়ে ভাতের পরিমাণ কম দিচ্ছেন। পাতলা ডাল খেলেও দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। রেস্তোরাঁয় ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা, ২০ টাকার নান রুটি রাখা হচ্ছে ২৫ টাকা। সবজি–ডালের প্লেটে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। পুরি-শিঙাড়া বা সমুচার মতো হালকা খাবারেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি দাম। ৫ টাকার শিঙাড়া হয়েছে ১০ টাকা। ১০ টাকার কিমাপুরির দাম এখন ১৫ টাকা।

বিক্রয়কর্মী মহারাজ মিয়া বলেন, নিত্যপণ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়লেও বেতন বাড়েনি। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে আবার হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে এখন আধা পেট খেয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে।

এভাবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রিকশাচালক মজিবর মিয়া (৫০)। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালাইতে যাইয়া খিদা লাগে বেশি। হোটেলে ব্যানে (সকালে) একটু বেশি খাবার না খাইলে চলে না। কিন্তু খাওনের দাম বাইড়া যাওনে আমাগো এহন মরণ দশা।’

জানতে চাইলে শহরের সাধনার মোড় এলাকার মা-মনি হোটেলের মালিক বাদশা মিয়া বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তা ছাড়া হোটেল ব্যবসায় লাইসেন্সের ফি বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে হোটেলমালিকেরা খাবারের দাম বাড়িয়েছেন।

এ বিষয়ে শিগগির অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী দাস। তিনি বলেন, যদি কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক খাবারের দাম অযৌক্তিক বাড়িয়ে থাকেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।