৯০ শতাংশ কাজ শেষ, জুলাইয়ে চালুর আশা

সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে যেতে আর ফেরি ব্যবহার করতে হবে না।

  • সেতুটির মূল কাঠামো দৃশ্যমান। দুই পাড়ে সংযুক্ত হয়ে গেছে সেতুর কাঠামো।

  • পায়রা বন্দর, কৃষি ও মৎস্যকেন্দ্রিক অর্থনীতি গতি পাবে।

পায়রা সেতু

ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেতে এখনো দুটি নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। একটি পদ্মা, অন্যটি পায়রা। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

পদ্মা সেতুর কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। সরকার ও সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদের আশা, জটিল কাজ সব শেষ হয়ে যাওয়ায় দেড় বছরের মধ্যে সেতুটি চালু করা যাবে। বাকি থাকে পায়রা। সেখানেও আশার খবর, পায়রা সেতুটি এ বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে পায়রার মূল সেতুটির অবকাঠামোর কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। আনুষঙ্গিক কাজও এগিয়ে চলছে সমানতালে। করোনা মহামারির কারণে এই সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিয়ে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল, এখন আর তা নেই। সেতুটির মূল কাঠামো এখন দৃশ্যমান হয়ে গেছে। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে এর কাঠামো। এই সেতুটি চালু হলে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে যেতে আর ফেরি ব্যবহার করতে হবে না। পায়রা বন্দর, কৃষি ও মৎস্যকেন্দ্রিক অর্থনীতিও গতি পাবে।

সেতু নির্মাণ প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও ইতিমধ্যে মূল সেতুটির ৯০ ভাগ কাজ শেষ। আর সার্বিক মূল্যায়নে ৭৫ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। তবে বর্তমানে নদীশাসনের কাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে। শ্রমিক–সংকটে এই ধীরগতি হচ্ছে।

নির্মাণাধীন সেতুর উত্তরে বরিশালের বাকেরগঞ্জের লেবুখালী এবং দক্ষিণে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সেতু নির্মাণের নকশা কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। চার লেনবিশিষ্ট সেতুটি নির্মিত হচ্ছে এক্সট্রাডোজড কেব্‌ল-স্টেইড প্রযুক্তিতে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও এই প্রযুক্তিতে নির্মিত। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি কেব্‌ল দিয়ে দুই পাশে সংযুক্ত থাকবে। উভয় পাড়ে সাত কিলোমিটারজুড়ে নির্মাণ করা হবে সংযোগ সড়ক। নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকবে। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, নদীর মধ্যে ৬৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪টি স্প্যানের কাজ প্রায় শেষ। দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা, ওজন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন এবং নদীশাসনের কাজও এগিয়ে চলছে।

জলতল থেকে সেতুটি নদীর ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু হবে। বাতি জ্বলবে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন সেতুটি নির্মাণে কাজ করছে।

পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্ষা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুটা পিছিয়ে ছিল। নতুন করে কাজ শুরুর পর অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের চেষ্টা, জুনেই এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া। কিন্তু এখন ফিনিশিংয়ের কাজে কিছুটা সময় লাগবে। এতে কাজে ধীরগতি আসবে। তারপরও সর্বোচ্চ জুলাইয়ের মধ্যে সেতুটি উন্মুক্ত করে দিতে পারব বলে আশাবাদী।’

পদ্মা ও পায়রা সেতু উন্মুক্ত হয়ে গেলে বরিশাল অঞ্চল শিল্প-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাবে। এ সম্পর্কে বরিশাল শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান মনে করেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দক্ষিণাঞ্চল পিছিয়ে থাকার জন্য অবকাঠামোর দুর্বলতাই প্রধানত দায়ী। তিনি বলেন, পদ্মা ও পায়রা সেতু চালু হলে এই দুর্বলতা ঘুচে যাবে। পায়রা বন্দর এক অনন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সূচনা করবে। পায়রা বন্দর শুধু দক্ষিণাঞ্চল কিংবা দেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। ট্রানজিট সুবিধার আওতায় প্রতিবেশী দেশ পায়রা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।