৯৯৯–এ ফোন, ‘জিনের বাদশা’র খপ্পরে পড়ার আগেই কিশোরী উদ্ধার

মধ্যরাতে ‘জিনের বাদশা’ পরিচয়ে মুঠোফোনে কল করা হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরীকে। ‘গুপ্তধনে’র প্রলোভনে ওই কিশোরীকে একা যেতে বলা হয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। জিনের বাদশার কথামতো একা না গেলে মা-বোনের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে সাবধান করা হয়।

গুপ্তধনের লোভ আর মা-বোনকে বাঁচাতে ওই কিশোরী ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে সোমবার বেলা তিনটায় বাহন পরিবহনের একটি বাসে একা রওনা দেয় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের উদ্দেশে। মেয়েটিকে বাড়িতে না পেয়ে পরিবারের লোকজন ফোন দেন খবর দেন ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায়। এরই মধ্যে কিশোরীকে বহনকারী বাসের এক যাত্রী মেয়েটির কথাবার্তায় তাকে সন্দেহ করেন। এরপর তিনি ৯৯৯–এ কল দেন। পুলিশের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত জিনের বাদশার খপ্পরে পড়ার আগেই সোমবার রাত আটটায় বগুড়ার শাজাহানপুর থানার সামনে বাস থামিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার শাজাহানপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে কিশোরীকে হেফাজতে নেয় ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া কিশোরীর (১৫) ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার একটি স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

বাসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার সময় ওই কিশোরীর পাশের আসনে ছিলেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক রমজান আলী। তিনি প্রথম আলোকে জানান, বাসটি ছাড়ার পর এর সুপারভাইজারের কাছে ঘন ঘন ফোন আসতে থাকে। ফোনে মেয়েটির বর্ণনা দিয়ে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সুপারভাইজার মেয়েটিকে ফোন দেন। কিন্তু মেয়েটি নিজের পরিচয় গোপন করে অন্য একটি নাম বলে। বারবার সুপারভাইজার ফোন দিয়ে মেয়েটিকে কথা বলতে অনুরোধ করার একপর্যায়ে মেয়েটি রেগে যায় এবং তাকে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে বলে চিৎকার করতে থাকে। তিনি (রমজান আলী) ৯৯৯–এ ফোন দেন। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মেয়েটির ওপর নজর রাখতে বলেন।

রমজান আলী বলেন, ‘এরপর আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করি সে কোথায় নামবে। প্রথমে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কথা বললেও পরে জানায়, গোবিন্দগঞ্জে নামবে। রাত আটটার দিকে বাসটি বগুড়ার শাজাহানপুর থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ মেয়েটিকে নামিয়ে হেফাজতে নেয়।’

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি জানিয়েছে, সে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাড়ি ওই উপজেলার একটি গ্রামে। শুক্রবার রাত তিনটায় জিনের বাদশা পরিচয়ে একটি ফোন আসে। গুপ্তধনের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে একাই সেখানে যেতে বলা হয়। জিনের বাদশার কথামতো একা না গেলে তার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে ব্ল্যাকমেল করা হয়। গুপ্তধন আর পরিবারকে বাঁচাতে সে পরিবারের কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে একাই বাহন পরিবহনের একটি বাসে রওনা হয় কথিত জিনের বাদশার সঙ্গে দেখা করতে। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারে নামে পুলিশ। তবে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ার আগেই মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে ফুলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকরাম হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ার আগেই উদ্ধার হওয়া ওই কিশোরীকে বগুড়ার শাজাহানপুর থানা থেকে ফুলপুর থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মামলা হয়নি।