৯৯৯–এ স্ত্রীর ফোন, এক দিন পর অপহৃত স্বামী উদ্ধার

স্বামীকে তুলে নেওয়ার পর দুর্বৃত্তদের হুমকিতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নাজমা বেগম ও তাঁর মা। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নাজমা। বাগমারা প্রেসক্লাব, ২০ আগস্ট
প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেন তাঁর স্ত্রী নাজমা খাতুন। পরে তাঁর স্বামীকে এক দিন পর উদ্ধার করে পুলিশ। বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
নাজমা খাতুনের অভিযোগ, স্থানীয় লিটন হোসেন (৩০) নামের এক বখাটে যুবক তাঁর সহযোগীদের নিয়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর (নাজমা) স্বামী মিজানুর রহমানকে (৩৪) অপহরণ করা হয়েছিল বলে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি ও তাঁর মা নিজেদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত যুবক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নাজমার বাড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাদিপুর গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার রাতে নাজমা তাঁর স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় ছিলেন। রাত আটটার দিকে লিটন তাঁর তিন সহযোগীসহ নাজমার বাড়িতে যান। তাঁরা বাড়িতে ঢুকে মিজানুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এ সময় স্ত্রীর সামনে তাঁরা মিজানুরকে কিল-ঘুষিও মারেন। তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন নাজমা।

নিরুপায় হয়ে নাজমা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেন। এরপর থানা–পুলিশ তাঁর বাড়িতে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অপহৃত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পুলিশ। অবশেষে আজ রোববার দুপুরে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকা থেকে মিজানুরকে উদ্ধার করা হয়। পরে স্ত্রীর কাছে মিজানুরকে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

এর আগে রোববার সকালে বাগমারা প্রেসক্লাবে এসে নাজমা খাতুন স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মা ও সন্তান নিয়ে তিনি উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে ভাড়া থাকতেন। সেখানে লিটনের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ সময় থেকে তিনি (লিটন) তাঁকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন। বিয়েরও প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করা হয়। নিরুপায় হয়ে ১ সেপ্টেম্বর তিনি হামিরকুৎসা ইউনিয়নের মিজানুরকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ভবানীগঞ্জ হেলিপেড এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকা শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে স্বামীকে অপহরণ করেন। এ সময় তাঁর মা–ও সঙ্গে ছিলেন। লিটনের লোকজন তাঁদের মুঠোফোনে হুমকি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন।

অভিযুক্ত লিটন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে পাল্টা–অভিযোগ করে বলেন, মেয়েটি (নাজমা) ভালো নয়। বিয়ের নামে বিভিন্ন লোকজনকে ব্ল্যাকমেইল করে থাকেন। জনৈক মিজানুরকে স্বামী দাবি করে তাঁর সঙ্গে থাকছেন, এমন জানার পর স্থানীয় কিছু লোক তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকেই অপহৃত মিজানুরকে ছেড়ে দেন অপহরণকারীরা। তবে তিনি নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন, সেখান থেকে আজ রোববার তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।