'ত্রিমাত্রিক' জেব্রাক্রসিং

দূর থেকে মনে হয়, রাস্তার মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা দাঁড় করে রাখা হয়েছে। সেগুলো সরিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। কাছে গেলে ভুল ভাঙে। আসলে সাধারণ জেব্রাক্রসিংই এটা। এ শুধু রঙের কারসাজি। রং দিয়ে একটি থ্রি ডাইমেনশনাল বা ত্রিমাত্রিক ধারা তৈরি করা হয়েছে জেব্রাক্রসিংয়ে। আর দেশে এই প্রথম ত্রিমাত্রিক জেব্রাক্রসিং করা হলো বরিশাল সিটি করপোরেশনে।

বরিশাল নগরের কয়েকটি সড়কে পরীক্ষামূলক থ্রিডি (থ্রি ডাইমেনশনাল) জেব্রাক্রসিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আধুনিক এই জেব্রাক্রসিং নগরবাসীর সড়ক নিরাপত্তায় অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পথচারী-যানচালকেরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চারুকলার শিল্পীদের সহযোগিতায় গত শনিবার রাত থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে নগরের জিলা স্কুল, বরিশাল ক্লাব, রাজাবাহাদুর রোড ও পুলিশ লাইনস ক্রসিংয়ে এই কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ত্রিমাত্রিক জেব্রাক্রসিং। ছবি: প্রথম আলো
বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ত্রিমাত্রিক জেব্রাক্রসিং। ছবি: প্রথম আলো

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নগরবাসীর সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা উন্নত দেশের মতো সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নগরের বিভিন্ন অংশে আধুনিক থ্রিডি জেব্রাক্রসিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটা পরীক্ষামূলক, যদি এটা কার্যকর হয়, তবে পর্যায়ক্রমে নগরের সব সড়কে একই ধরনের জেব্রাক্রসিং করা হবে।’

সাব্বির হোসেন নামের এক অটোরিকশার চালক বলেন, ‘নগরের জিলা স্কুল মোড়টি খুবই ব্যস্ততম একটি সড়ক। চারটি সড়কের সংযোগস্থল হওয়ায় স্থানটি চালক-পথচারী উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আগে এই এলাকা অতিক্রমের সময় আমাদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো। এরপরও প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত না। কিন্তু নতুন জেব্রাক্রসিং হওয়ার পর এখানে চালকদের গতিনিয়ন্ত্রণ না করে উপায় নেই।

পিয়াস হাসান নামের এক মোটরসাইকেলচালক বলছিলেন, এটা খুবই আকর্ষণীয় এবং দূর থেকে দৃশ্যমান হওয়ার কারণে খুবই একটি কার্যকর পদক্ষেপ, যা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে খুব বেশি সহায়ক হচ্ছে।

জেব্রাক্রসিং তৈরির কাজ চলছে। ছবি: প্রথম আলো
জেব্রাক্রসিং তৈরির কাজ চলছে। ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবির বলেন, বরিশাল নগরে এ ধরনের আধুনিক জেব্রাক্রসিং এটাই প্রথম। নগরের সড়কের বিভিন্ন অংশে আধুনিক থ্রিডি জেব্রাক্রসিংয়ের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই কাজ হচ্ছে। এটা প্রচলিত জেব্রাক্রসিংয়ের চেয়ে টেকসই ও কার্যকর। অন্তত তিন বছর এটা দৃশ্যমান থাকবে।

আধুনিক এই জেব্রাক্রসিংয়ের কাজ করছে স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এ ধরনের জেব্রাক্রসিং খুবই কার্যকর একটি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে যানবাহনের গতিনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে চালকদের আরও বেশি সজাগ ও সচেতন করবে এবং এই প্রযুক্তি এ দেশে সম্পূর্ণ নতুন। সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা নতুন সংযোজন।

বরিশাল নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘থ্রিডি জেব্রাক্রসিংয়ের এই নির্মাণশৈলী আমাদের পুরোনো ও ঐতিহ্যগত জেব্রাক্রসিংয়ের চেয়ে আরও বেশি দৃশ্যমান হওয়ায় এটা পথচারী ও যানচালকদের সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’