চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। নগরের মানুষ এখানে র্যাম্প চান না। তাই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড়ের পাশে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। নগরের টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ডমুখী দ্বিতল সড়কের ওপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। তবে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদে এখন সড়কের বাইরে গিয়ে র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সিডিএ। যদিও এখানে কোনো র্যাম্প নির্মাণ না করার দাবিতে অনড় রয়েছেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা।
সমাবেশে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, বাহবা পাওয়ার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও উড়ালসড়কের মতো একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব স্থাপনা মানুষের প্রয়োজন আছে কি না, তা বিবেচনা নেয় না সরকার। এখানে মানুষের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। সব ধরনের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা ওপর থেকে মানুষের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত জনগণের টাকায় এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও তা মানুষের কোনো কাজে আসে না। মানুষ উপকৃত হন না।
অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, এই দেশে ভালো ভালো পরিকল্পনা যে হয় না তা নয়। এখানে ভালো ভালো পরিকল্পনাবিদ আছেন, ভালো ভালো প্রকৌশলী আছেন। কিন্তু তাঁদের যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় না। বরং বিদেশিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করানো হয়। এই কাজগুলো মানুষের আদৌ কোনো কাজে আসবে কি না, তা-ও চিন্তা করে না সরকার। অনেক হয়েছে। এখন উন্নয়ন করতে হলে মানুষকে জিজ্ঞেস করতে হবে, এই উন্নয়নের দরকার আছে কি না, কাজে লাগবে কি না। প্রয়োজন না হলে করার দরকার নেই।
সমাবেশে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, এখানে যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তারও প্রয়োজন ছিল না, এটা দিয়ে যাবেন মাত্র ২ শতাংশ মানুষ। এখানে কোনো গণপরিবহন চলবে না। তাহলে বাকি ৯৮ শতাংশ মানুষের সমস্যার সমাধান কীভাবে করা হবে? টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকেই জানেন না। চট্টগ্রামের উড়ালসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিষয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে আপত্তি গ্রাহ্য করা হয়নি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও উড়ালসড়ক নির্মাণের চেয়ে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন এই সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শহরে কোনো ধরনের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। এটার বিষয়ে কারও কোনো নজরও নেই। তিনি বলেন, নিউমার্কেট থেকে গাড়ি বিমানবন্দর এলাকায় সহজে যাতায়াতের যাওয়ার জন্য র্যাম্প নির্মাণের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে সিডিএ। কিন্তু নিউমার্কেট থেকে ওই এলাকায় যাওয়ার তিনটি বিকল্প সড়ক রয়েছে, যা দিয়ে সহজেই যাওয়া যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান বলেন, এই র্যাম্প নির্মাণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। আছে টাকার সম্পর্ক। একশ্রেণির লোক এই র্যাম্প নির্মাণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তাই নিজেদের স্বার্থে র্যাম্প নির্মাণ করতে চান। কিন্তু জনগণ এই র্যাম্প চান না। সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ এই র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।
সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রিতু পারভী ও মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন চিকিৎসক ইমরান বিন ইউনুস, নাট্যজন শিশির দত্ত, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী প্রমুখ।