নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীসহ নয়টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলার বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। এদিকে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে জেলার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের প্রভাবে আগামী কয়েক দিন নোয়াখালীতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা জজ আদালত আঙিনা, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনের সড়ক, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ভবন, নোয়াখালী প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, কৃষ্ণরামপুর, উত্তরহাট, কাজী কলোনি, মাস্টারপাড়া, সোনাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় সব কটি সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে অনেক আধা পাকা বসতঘর। চৌমুহনী-মাইজদী-সোনাপুর চার লেন সড়কের টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়সহ কয়েকটি অংশে পানি ওঠায় আশপাশের দোকানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশের পানিনিষ্কাশনের নালা উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়ে। এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালার ময়লা পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে।
কৃষ্ণরামপুর এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে হাঁটুসমান পানি। রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে আজ দুপুরে রান্নাও করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে খাবার কিনে এনেছেন। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
সকালে শহরের পুলিশ কেজি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ছোট ছোট শিশুরা পরীক্ষা দিতে এসেছে বিদ্যালয়টিতে। এতে শিশু ও অভিভাবকেরা ভোগান্তির মুখে পড়েন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ ফ ম রহমত উল্যাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য পরীক্ষা শুরুর সময়ও তাঁরা পিছিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী আসতে না পারে, সেটি বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
নোয়াখালী পৌরসভার প্যানেল মেয়র রতন কৃষ্ণ পাল বলেন, তিনি সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। নালাগুলোতে পানিনিষ্কাশনে তেমন কোনো সমস্যা নেই। অধিক পরিমাণ বৃষ্টিই এ মুহূর্তে বড় সমস্যা। এরপর পানিনিষ্কাশনে কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দ্রুত অপসারণ করতে পৌরসভার কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টির ফলে জেলার বেশির ভাগ এলাকাই এখন প্লাবিত হয়ে আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া পানিবন্দী মানুষের জন্য শুকনা খাবার ও কিছু নগদ অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিজ নিজ এলাকার লোকজনের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি এরই মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।