প্রশমনের সেবা থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ রোগী

ক্যানসারসহ নানা নিরাময় অযোগ্য রোগে দেশে ভুগছেন বহু মানুষ। মৃত্যুর আগে তাঁদের দরকার ব্যথাহীন জীবন। কিন্তু খুব কম রোগীই জরুরি এই সেবা পেয়ে থাকেন।

মলিনা বেগমের কথা স্পষ্ট শোনা যায় না। গলার স্বর নিচু। কথা বলতে কষ্ট হয়। সারা শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসায় আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শরীরজুড়ে ব্যথা। যে কদিন বেঁচে থাকবেন, ব্যথা কম নিয়েই যেন বাঁচতে পারেন, চিকিৎসকেরা সেই সেবাই মলিনা বেগমকে দিচ্ছেন।

মলিনা বেগমের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি ভর্তি আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ই-ব্লকের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে।

৩১ অক্টোবর ওই বিভাগের চিকিৎসকেরা বলছিলেন, মলিনা বেগম স্তন ক্যানসারের রোগী। কয়েক বছর আগে তাঁর বাঁ স্তনে ক্যানসার শনাক্ত হয়। এরপর ক্যানসার শনাক্ত হয় বগলে। সেই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে আর সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। রোগ এখন নিরাময়ের অযোগ্য। তিনি জীবনের প্রান্তিক পর্যায়ে।

ব্যথায় কাতর মলিনা বেগম বাঁ হাতের ওপর ডান হাত বোলাতে বোলাতে প্রথম আলোকে বলছিলেন, ব্যথায় টন টন করে, চিন চিন করে। যন্ত্রণা সারা শরীরে। পাশে থাকা চিকিৎসক জানালেন, তাঁকে নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। জীবনের শেষ দিনগুলোতে ব্যথা প্রশমনই তাঁর চিকিৎসা।

বিএসএমএমইউর এই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগে যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন বা ভর্তি হন, তাঁরা সুস্থ হওয়ার আশায় আসেন না। জীবনের আশা তাঁদের নেই। আসেন যন্ত্রণাহীন, ব্যথামুক্ত শেষ দিনগুলোর আশায়। যে সেবা বা চিকিৎসা তাঁদের দেওয়া হয়, সেটা প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমনসেবা।

প্রশমনসেবা

স্বাস্থ্যসেবার একটি লক্ষ্য রোগ প্রতিরোধ করা। এই প্রতিরোধের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মানুষ রোগে আক্রান্ত হন। রোগ সারানোর জন্য মানুষ চিকিৎসা নেন। কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে বা চিকিৎসা নিলেও কিছু রোগ নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে পড়ে। যেমন হয়েছে মলিনা বেগমের। নিরাময় অযোগ্য রোগ নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে। এই বেঁচে থাকা স্থায়ী হতে পারে এক সপ্তাহ, হতে পারে এক বছর বা তারও বেশি।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক কষ্টে বা সমস্যায় ভোগেন। এসব সমস্যা নিরূপণ ও সমস্যা সমাধানের জন্য দেওয়া সেবাই প্রশমনসেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর পরিবারের সদস্যদের বা কাছের মানুষেরও এই সেবার প্রয়োজন হয়।

প্রশমনসেবার প্রসঙ্গ উঠলেই ক্যানসারের কথা সবার আগে আসে। বাংলাদেশের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসক বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার কথা বলেন। ব্যথা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, ক্যানসার চিকিৎসক বা ক্যানসার চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রশমনসেবার ব্যাপারে আগ্রহী। তাই সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, প্রশমনসেবা শুধু নিরাময় অযোগ্য ক্যানসার রোগের ক্ষেত্রেই লাগে। চিকিৎসকেরা বলছেন, আরও অনেক রোগের জন্য এই সেবার প্রয়োজন আছে। এর মধ্যে আছে দীর্ঘস্থায়ী হৃদ্‌রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এইডস, কিডনি রোগ, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা। তবে বিশ্বব্যাপী ক্যানসার রোগীদের জন্য এই সেবার বিস্তার যতটা দেখা যায়, নিরাময় অযোগ্য অন্য রোগের ক্ষেত্রে ততটা দেখা যায় না।

বৈশ্বিকভাবে দিন দিন প্রশমনসেবার প্রয়োজন বা চাহিদা বাড়ছে। এই সেবাকে আরও বেশি মানুষের কাছে নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ১৭০টি দেশ একটি সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তে প্রশমনসেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়। বাংলাদেশ ওই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

বাংলাদেশে কত মানুষ নিরাময় অযোগ্য রোগে ভুগছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বিএসএমএমইউসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ নিরাময় অযোগ্য রোগে ভুগছেন।

দেশের পরিস্থিতি জানতে সরকারের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট), বিএসএমএমইউ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার যৌথভাবে ২০১৪ সালে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ছয় হাজার হাসপাতাল এবং চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৫৩ হাজার জনবল দরকার।

বাংলাদেশে প্রশমনসেবার চিত্র খুব একটা ভালো নয়। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ডওয়াইড হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যালায়েন্স যৌথভাবে ‘গ্লোবাল অ্যাটলাস অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। তাতে প্রশমনসেবার পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্বের দেশগুলোকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ ৩-এ শ্রেণিভুক্ত দেশ। এই শ্রেণির দেশগুলোতে প্রশমনসেবা আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সেবাকাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। বিশ্বে এমন দেশ আছে ৬৫টি।

যেসব দেশে জানামতে কোনো প্রশমনসেবা নেই, তারা ১ শ্রেণিভুক্ত। এমন দেশের সংখ্যা ৪৭। উন্নত ও সমন্বিত প্রশমনসেবা আছে যেসব দেশে, সেসব দেশকে ৪বি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এমন দেশ ৩০টি। এসব দেশের অধিকাংশই ইউরোপ ও আমেরিকার।

দেশে এই সেবা কোথায়

দেশে খুব স্বল্পসংখ্যক হাসপাতালে প্রশমনসেবার ব্যবস্থা আছে। সেবার আয়োজন যতটুকু আছে, তার প্রায় সবটাই রাজধানীকেন্দ্রিক।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০১৬ সালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগ খোলা হয়। প্রথমে বহির্বিভাগ চালু হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত বছর থেকে বিভাগটি চালু হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক লুবনা মরিয়াম। তিনি জানান, প্রশমনসেবা দরকার এমন রোগীদের জন্য হাসপাতালে ১০টি শয্যা বরাদ্দ আছে।

২০০৭ সালে বিএসএমএমইউয়ে একটি প্যালিয়েটিভ সেন্টার এবং ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলা হয়। বর্তমানে অন্তর্বিভাগে ২১টি শয্যা আছে। এর মধ্যে নারীর জন্য ৯টি, পুরুষের জন্য ৯টি এবং শিশুদের জন্য ৩টি শয্যা রয়েছে।

এ ছাড়া রয়েছে বহির্বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বহির্বিভাগ ভবনের ৫১১ নম্বর কক্ষে প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা নিয়মিত রোগী দেখেন। এ ছাড়া লসিকা গ্রন্থির সমস্যা আছে এমন রোগীদের জন্য প্রতি সোমবার বিশেষ ক্লিনিক রাখা হয়।

বাংলাদেশ শিশু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক বিভাগ আছে। একটি বিভাগে শিশুদের প্রশমনসেবা দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধীনে কিছু রোগীকে প্রশমনসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রশমনসেবা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে হসপিস বাংলাদেশ, ফসিউদ্দিন খান রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, আয়াত ফাউন্ডেশন, আশিক ফাউন্ডেশন, শান্তি ফাউন্ডেশন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

এসব প্রতিষ্ঠান সাধ্য অনুযায়ী সেবা দেয়। তবে এরা রোগীদের পরিবারের সদস্যদের সচেতন করে, কী করে সেবা দিতে হয়—সে বিষয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণও দেয়।

বাড়িতেই সেবা সম্ভব

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা বলছেন, নিরাময় অযোগ্য রোগীদের হাসপাতালে রেখেই প্রশমনসেবা দিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। বহু রোগীকে বাড়িতে রেখেই একই প্রশমনসেবা দেওয়া সম্ভব। বাড়িতে রেখে প্রশমনসেবার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত দেখা যায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালা রাজ্যে। সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দেন। কেরালা থেকে একাধিক চিকিৎসক ও নার্স এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরেছেন। লুবনা মরিয়াম তাঁদের একজন।

বিএসএমএমইউর প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ ঢাকা শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীদের এই সেবা দিচ্ছে। প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এই সেবা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। সেবা দিতে সপ্তাহে এক দিন চিকিৎসক যান, এক দিন নার্স যান। সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সেবা দিতে যান প্রশিক্ষিত প্রশমনসেবা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এর খরচ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া বিএসএমএমইউ রাজধানীর কড়াইল বস্তি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০১৫ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় এই সেবা শুরু করে। বিএসএমএমইউর প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কড়াইল বস্তিতে এখন সেবা দিচ্ছে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে বিএসএমএমইউর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিসহ ওয়ার্ল্ডওয়াইড হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যালায়েন্স ও আয়াত ফাউন্ডেশন। অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে প্রশমনসেবার কাজ চলছে। সেখানে দেখার চেষ্টা চলছে, কী করে মূলধারার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রশমনসেবাকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

জনবল ও পরিকল্পনার অভাব

প্রশমনসেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকেরা বলছেন, এখানে জনবলের সংকট রয়েছে। জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক লুবনা মরিয়াম বলেন, প্রশমনসেবা বিষয়ে কোনো পদ নেই। তবে তাঁদের বিভাগে তাঁরা চারজন চিকিৎসক কাজ করেন। এর মধ্যে প্রশমনসেবা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে মাত্র একজন চিকিৎসকের।

বিএসএমএমইউতে ওই বিভাগে শিক্ষকের পদে আছেন তিন চিকিৎসক। এ ছাড়া আছেন চারজন মেডিকেল অফিসার। এত কম চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ এবং বাড়ি বাড়ি সেবা দেওয়া কঠিন।

তবে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই বিশেষজ্ঞ জনবল বাড়াতে সরকার প্রশমনসেবার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি দিতে বিএসএমএমইউকে এমডি কোর্স চালুর অনুমতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। একজন জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে ও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই বিষয়ে কাজ করছেন। একজনকে পাঠানো হয়েছে গোপালগঞ্জে, আরেকজনকে ঠাকুরগাঁওয়ে। শেষের দুই জেলায় প্রশমনসেবা নিয়ে তাঁরা কাজ করতে পারছেন না। বাকি একজন কাজ করছেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

সরকার কী করছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রায় সব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয় ২১টি পৃথক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে। তবে কোনো কর্মপরিকল্পনায় প্রশমনসেবার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই। কারণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই সেবাকে কখনো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি।

তারপরও অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকে ২০১৯ সালে প্রশমনসেবা বিষয়ে একটি জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণে দুটি পৃথক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়। জাতীয় নির্দেশিকা ও ম্যানুয়ালের ব্যবহার খুব সীমিত পর্যায়ে বলে জানা গেছে।

মানুষের জীবনের শেষ সময় নিয়ে জাতীয়ভাবে কোনো নীতি নেই, কোনো পরিকল্পনা নেই, কোনো কর্মসূচি নেই। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারকদের ধারণা ও আগ্রহ কম। বাংলাদেশে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ এই প্রশমনসেবার সুযোগ পাচ্ছে। এর অর্থ, দেশে গভীর ব্যথা, তীব্র যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার জার্নালের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক নিজমউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যের মূলধারায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে অন্তর্ভুক্ত করতে দরকার চারটি বিষয়—সচেতনতা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, দৃশ্যমান সেবা এবং নীতি। দেশে এর সব কটির ঘাটতি আছে। প্রয়োজনীয় এই সেবা বাড়াতে হলে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা দরকার।