বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিন আসন করা সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তকে আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আগের মতো বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
রায়ের বিষয়টি জানিয়ে পরে রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগের মতো বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল, একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল। এখন বাগেরহাট-৪ আসন পুনর্বহাল হবে এবং গাজীপুর-৬ আসন বাদ পড়বে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচন কমিশনের সচিবসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী সামান্তা এনাম ও রাজিয়া সুলতানা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভিপ্রায় ও সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা গড়ে তোলে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের শুনানিতেও তারা অংশ নেয়।
‘বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে হরতাল চলছে’ শিরোনামে ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা ওই রিট করেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর ভাষ্য, ১৯৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল। নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে একটি কমিয়ে তিনটি সংসদীয় আসন করে। এটি সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনের ৬(২) ধারার পরিপন্থী।