সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের মেয়ে তাহসীন কুমিল্লার নতুন মেয়র

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে উপনির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাহসীন বাহার (ডানে চশমা পরা)। কুমিল্লা জিলা স্কুল, ৯ মার্চছবি: আশরাফুল আলম

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তাহসীন বাহার। তিনি এই সিটি করপোরেশনসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে।

বাহাউদ্দিন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে আছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহসীন বাহার। স্থানীয় সরকারের এই উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না থাকায় বাস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহসীন। তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা মো. মনিরুল হক (সাক্কু)। ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুই দফায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনিরুল। এবার টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট ভোট।

এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮। ভোট দিয়েছেন ৯৪ হাজার ১১৫ জন। ভোটের হার ৩৮ দশমিক ৮২। ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তাহসীন বাহার বলেন, কুমিল্লার মানুষ যে পরিবর্তন চাচ্ছে, উন্নয়ন চাচ্ছে, তারই ফলাফল ভোটে পেয়েছেন। কুমিল্লা নগরীকে পরিকল্পিতভাবে স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন তিনি।

কুমিল্লায় সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগ্রত মানবিকতা’য় যুক্ততার মধ্য দিয়ে নগরবাসীর সামনে আসেন তাহসীন বাহার। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি কুমিল্লা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাহসীন বাহারকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান কর্মী–সমর্থকেরা। কুমিল্লা জিলা স্কুল, ৯ মার্চ
ছবি: আশরাফুল আলম

মনিরুল হকের কাছ থেকে কুমিল্লার মেয়র পদ হাতছাড়া হয় ২০২২ সালের নির্বাচনে। সে সময় বাহাউদ্দিনঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হকের কাছে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে আরফানুলের মৃত্যু হওয়ায় এই সিটিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের সম্পূর্ণ ফল ঘোষণার পর বিজয় চিহ্ন দেখান তাহসীন বাহার (ডানে চশমা পরা)। সঙ্গে তাঁর সমর্থকেরা। কুমিল্লা জিলা স্কুল, ৯ মার্চ।
ছবি : আশরাফুল আলম

নির্বাচনে এই দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবির থেকে আরও দুজন প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। এঁদের মধ্যে নুর-উর রহমান হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৭৩ ভোট। আর ঘোড়া প্রতীকে নিজাম উদ্দিন পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৫ ভোট।

তাহসীনের বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিন বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভায় ১৯৮৪ ও ১৯৮৯ সালে চেয়ারম্যান ছিলেন। ভোটারদের অন্তত ১০ জন বলেছেন, সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই তাঁর মেয়ে নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন। অপর দিকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে এবার সেভাবে ঐক্য দেখা যায়নি।

আপনার বাবা এই এলাকার সংসদ সদস্য, আপনি মেয়র হচ্ছেন, এতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হবে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তাহসীন বলেন, ‘এটা বরং কুমিল্লার জন্য ভালো হবে। কারণ, আমার বাবা এমপি, বারবার কুমিল্লার মানুষের মন জয় করে, মানুষের ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি আমার বাবার পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখন দুজন একসঙ্গে কাজ করলে কুমিল্লার উন্নয়ন এবং কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ অনেক বেশি হবে।’

আরও পড়ুন