জব্বারের বলীখেলার মেলা: রাস্তা থেকে দোকান তুলে দিল পুলিশ, বসবে শুধু মাঠে

রাস্তায়, ফুটপাতে পুলিশ বসতে দিচ্ছে না। তাই বলীখেলার মেলা উপলক্ষে বসা দোকান গুটিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলার মেলা উপলক্ষে এবার সংলগ্ন ফুটপাত বা সড়কে ভাসমান দোকান বসতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে মেলার মাঠ–সংলগ্ন সড়ক ও ফুটপাত থেকে দোকান তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, এবার দোকানপাট বসবে শুধু মেলার মাঠে।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে মেলা শুরু হওয়ার কথা। মেলা উপলক্ষে তিন-চার দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা নানান পণ্য নিয়ে এসেছেন। অনেকে সংলগ্ন ফুটপাত ও সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, দোকান খুলেছেন। তবে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশ গিয়ে তাঁদের দোকানপাট তুলে দেয়।

লালদীঘির সড়ক বিভাজকে চুড়ির দোকান খুলেছিলেন আল-আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে চার দিন আগেই মালামাল নিয়ে এসেছেন। রাস্তা বন্ধ করে বসেননি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে বসতে না দেওয়ার কথা আগে জানালে তিনি আসতেন না।

দোকানপাট গুটিয়ে অলস বসে আছেন বিক্রেতারা
ছবি: সৌরভ দাশ

পাশের কে সি দে সড়কে হাঁড়িপাতিল আর গৃহসজ্জার সামগ্রী নিয়ে বসেছিলেন খায়রুল। তিনিও ঢাকা থেকে এক ট্রাক মালামাল নিয়ে মেলায় এসেছেন। খায়রুল বলেন, রাতে পুলিশ এসে তাঁদের চলে যেতে বলেছে। ওই সময় হুড়োহুড়িতে কিছু মালামাল নষ্ট হয়েছে। এত মালামাল নিয়ে এখন কীভাবে ফিরবেন, এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাঁর।

পুলিশের ভাষ্য, মেলার মাঠে দোকান বসাতে কোনো বাধা নেই। আশপাশের সড়ক ও ফুটপাতে দোকান বসানো যাবে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রাস্তায় দোকান না বসানোর জন্য আগে থেকেই মেলা কমিটিকে বলা হয়েছে, মাইকিংও করা হয়েছে। ফুটপাতে দোকান বসালে, লোকজন রাস্তায় এসে দাঁড়াবে। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ফুটপাত থেকেও দোকান তুলে দেওয়া হচ্ছে।’

মেলা কমিটির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহ্য মেনে জব্বারের বলীখেলার মেলা প্রতিবছর হয়ে আসছে। এবার রাস্তায় দোকান না বসানোর জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের বলে দিয়েছি।’

রাস্তায় দোকান বসতে দেয়নি পুলিশ। তাই দোকান তুলে নিচ্ছেন বিক্রেতারা
ছবি: সৌরভ দাশ

প্রতিবছর ১২ বৈশাখ ঐতিহ্যবাহী এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বকশিরহাটের আবদুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালে এই বলীখেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণ ও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে কুস্তি বা বলীখেলা শুরু করেছিলেন লালদীঘি মাঠে। সেই থেকে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কালের বিবর্তনে এই বলীখেলা এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবার জব্বারের বলীখেলা ১১৬ বছরে পা রাখতে চলেছে। আগামীকাল শুক্রবার লালদীঘি মাঠে এবারের বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে লালদীঘির মাঠ ঘিরে তিন দিনের বৈশাখী মেলা বসেছে।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে দুই বছর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুই বছর বলীখেলা হয়নি। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন