সাত বছর ধরে বন্ধ জাতীয় আর্কাইভসের মিলনায়তন
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় আর্কাইভসের ২৮০ আসনবিশিষ্ট মিলনায়তনটি বানানো হয়েছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে। এটি তৈরির কাজ শেষ হয় আর্কাইভস ভবন নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১২ সালে। সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০-২১-এ বলা হয়েছে, দিনব্যাপী সাড়ে ১১ হাজার টাকায় এবং অর্ধেক বেলার জন্য সাড়ে ৭ হাজার টাকায় যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এটি ভাড়া নিতে পারবেন। বাস্তবে ২০১৫ সাল থেকে তালাবদ্ধ এই মিলনায়তনের দরজা।
একটি জাতীয় আর্কাইভসের সংরক্ষণাগারের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সব সময় চালু থাকার কথা। কেন্দ্রীয় যন্ত্রটি বন্ধ থাকায় শুধু মিলনায়তন নয়, ভবনের ১২টি স্ট্যাকে (সংরক্ষণকক্ষ) কাজ করছে না শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। ফলে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান নথি ও দলিলপত্র।
এখন বিকল্প উপায়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। পুরো কাজের জন্য আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে।ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় সাত বছর ধরে মিলনায়তন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ত্রুটি দেখা দিয়েছে শব্দ ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহসহ এটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধায়। ফলে কর্তৃপক্ষও ব্যবহার করতে পারছে না, ভাড়া দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর চালু ছিল মিলনায়তনটি।
জাতীয় আর্কাইভসের ভবন নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মিলনায়তনসহ মূল ভবনের চতুর্থ থেকে ষষ্ঠতলার শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। ২৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কেন্দ্রীয় এবং ৫ টন করে ক্ষমতাসম্পন্ন ৩০টি ছোট শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হয়। বৈদ্যুতিক অন্যান্য কাজসহ যার মূল্য ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আড়াই শ টনের কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করা হয় মিলনায়তন।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সংযোগ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল মেসার্স অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মো. সিরাজউদ্দৌলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার এক বছর পর তারা আমাদের কাছ থেকে মিলনায়তনসহ অন্যান্য ফ্লোর বুঝে নিয়েছে। এমনকি জামানতও ফেরত দিয়েছে। এর কিছুদিন পর থেকে আর্কাইভস কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করছে, এসি কাজ করছে না। এর জন্য কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে অব্যবস্থাপনা দায়ী।’
জানতে চাইলে জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলোর ওয়ারেন্টি থাকে এক বছর করে। অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়। এসব সংস্কারের কাজ মূলত আর্কাইভস ভবন নির্মাণের তৃতীয় পর্যায়ের কাজের আওতায় পড়েছে। সেটি নানা জটিলতায় দীর্ঘ হচ্ছে। এ কারণে মিলনায়তন চালুর কাজটি হচ্ছে না।’
জাতীয় আর্কাইভসের পুরো ভবন নির্মাণের কাজে প্রথম থেকে প্রকল্প পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রকল্প উপদেষ্টা লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দুই পর্যায়ের নির্মাণকাজে এই প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প উপদেষ্টা লিমিটেডের কারিগরি পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পরই তারা আমাদের বাদ দিতে চেয়েছিল অথচ পুরো ভবনের নকশাই আমরা একবারে করে দিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে আবার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ২০১৬ সালে আমরা মামলা করি। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের মধ্যস্থতায় ২০২১ সালে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।’
এই মামলার ফলে আরও দীর্ঘ হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ত্রুটি নির্ণয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়া।
জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা ৫ কোটি টাকার বেশি চেয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পরিমাণ অর্থের বরাদ্দ নেই। এখন বিকল্প উপায়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। পুরো কাজের জন্য আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে।